নীলফামারীর ডোমার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনি ময়দান জমে উঠেছে। বিএনপি বা বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করায় উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মধ্যে। আগামী ৮ মে ডোমার উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রার্থী রয়েছে।
এর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সম্পাদক, সহ-সম্পাদক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুব মহিলা লীগের নেত্রীসহ ৫ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। বাকি তিনজন প্রার্থী সরাসরি রাজনীতির মাঠে না থাকলেও তারাও আওয়ামী ঘরানার প্রার্থী বলে ভোটাররা জানিয়েছেন।
নির্বাচনের দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে উত্তেজনা। বিশেষকরে নির্বাচনকে ঘিরে ৬ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এতে দলের অভ্যন্তরে বাড়ছে ক্ষোভ ও হতাশা। ৬ ভাগে বিভক্ত হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজনের আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ আনারস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. মনোয়ার হোসেন হেলিকপ্টার, সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল হক মনজু কাপ পিড়িচ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকার ঘোড়া ও যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সরকার ফারহানা আখতার সুমি টেলিফোন প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। অপরদিকে এক সময়ের বিএনপি কর্মী মদনমোহন সিংহ পিন্টু মোটরসাইকেল, রাকিব হোসেন প্রধান কই মাছ আর এহছানুল হক দোয়াত কলম প্রতীকে নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ৬ ভাগে বিভক্ত হয়ে একেক প্রার্থীর পক্ষে ভোট করছেন। এতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো। উপজেলা যুবলীগ কাজ করছে স্কতন্ত্র প্রার্থী মদন মোহনের। আর বেশির ভাগ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি/সম্পাদক কাজ করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদের। উপজেলা সভাপতি/সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকের হয়ে কাজ করছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সযগঠনের নেতা-কর্মীরা।
তবে বেশিরভাগ প্রার্থী আওয়ামী লীগের হলেও এলাকা ভিত্তিক ভোট রয়েছে সকল প্রার্থীর। একেক প্রার্থী একেক এলাকার হওয়ায় তাদের নিজস্ব ভোট ব্যাংকগুলো তারা শেষ অবধি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
উপজেলার সর্ব বৃহৎ ইউনিয়ন ভোগডাবুড়ি। সেখানে ভোট রয়েছে ৩০ হাজারের উপরে। সেই ইউনিয়ন থেকে প্রার্থী হয়েছেন যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী সরকার ফারহানা আখতার সুমি। ভোটারদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ইউনিয়নের ভোটগুলো যদি সুমি পায় তবে তার সাথেই মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
অন্যদিকে বোড়াগাড়ী ইউনিয়ন থেকে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ ও মদন মোহন সিংহ। পাঙ্গা মটুকপুর থেকে রয়েছেন একক প্রার্থী আব্দুল মালেক সরকার। তবে সোনারায় ও হরিনচড়া ইউনিয়েনর একক প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মনজুরুল হক ও পৌরসভা থেকে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. মনোয়ার হোসেন।
তবে ভোটাররা জানিয়েছেন, ইউনিয়নের ভোট যে প্রার্থী ধরে রাখতে পারবে তার জয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। প্রায় ২ লক্ষ ৮ হাজার ভোটার থাকলেও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন প্রার্থীরা। বিএনপি ও জামায়াতের ভোটাররা ভোট দিতে না আসলে ভোটের ফলাফল অন্যরকম হতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ বিন আমিন সুমন বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভোট বর্জন করেছে। তাই বিএনপি সমর্থিত ভোটাররা ভোট দিতে আসবেন না। একই কথা বলছেন উপজেলা জামায়াতের নেতা-কর্মীরাও।
তবে উপজেলার রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ করতে নিজ প্রার্থীকে জয়ী করতে উঠে পড়ে লেগেছে নিজ নিজ নেতারা। সে কারণে আলোচনার শীর্ষে এখন উপজেলা নির্বাচন। কে হচ্ছেন এই উপজেলার চেয়ারম্যান বা কার সম্ভাবনাই বা কেমন তা নিয়ে আলোচনা থাকলেও বেশি যে বিষয়টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভাবাচ্ছে তা হলো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের ক্ষমতার বলয় সংকুচিত হওয়া না হওয়ার বিষয়টি।
নিজের অস্বিত্ব রক্ষা করতে সকল প্রার্থী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ডোমার উপজেলার নির্বাচন যে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ হতে যাচ্ছে তা এক প্রকার নিশ্চিত।