উপজেলা নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়ার পাশাপাশি মন্ত্রী ও এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে উপজেলায় নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার(২২ এপ্রিল) ডিমলা উপজেলায় নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকারের পরিবারের তিন স্বজন তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। বরং তারা নির্বাচনে তারা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
জেলা নির্বাচন অফিসার ও রির্টানীং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন সোমবার বিকালে ডিমলা উপজেলায় কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। ডিমলা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৪ জন। তারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি টানা দুই মেয়াদের নৌকা প্রতিকের উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য ফেরদৌস পারভেজ ও বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান।
উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমুল কর্মীরা জানায়, চারজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে দুইজন এমপি আফতাব উদ্দিন সরকারের পরিবারের নিকট আত্বীয়। এরমধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু হলো এমপির আপন চাচাতো ভাই ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক ফেরদৌস পারভেজ হলেন এমপির আপন ভাতিজা।
তৃণমুল নেতাকর্মীরা আরও জানান, চাচাতো ভাই আনোয়ারুল হক মিন্টুর সঙ্গে এমপির ব্যাক্তিগত সর্ম্পক খুব একটা ভাল নয়। ফলে এমপি তার ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের ডেকে ভাতিজার পক্ষে নির্বাচন করার জন্য রিতিমত নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে দলের নেতাকর্মীরা বাধ্য হয়ে নির্বাচনে ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজের পক্ষে মিছিল মিটিং করতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থীর মধ্যে এমপির আপন ভাতিজি বউ ডিমলা সদর ইউনিয়নের মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পারুল বেগম প্রার্থী হয়েছেন। উক্ত পদে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি জাহানারা বেগম ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াত পন্থি আয়শা সিদ্দিকাও রয়েছে।
সোমবার ডিমলা উপজেলা তৃণমুল নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে মন্তব্য করেছেন, এটি ঠিক নয়, এমপিতার পরিবার ছাড়া কাউকেই দেখেন না। তিনি জনগন ও তৃণমুল নেতাকর্মীদের কোন কথাই আমলে নেননা। এমপি তার চোখে শুধু পরিবারতন্ত্রই করতে ব্যস্ত। এরা ভোটের সব পদ নিয়ে যাবে তাহলে তৃণমূলের কর্মীরা কী করবেন? তাদের পদে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই এমন প্রশ্ন তুলেন অনেকে। ফলে ডিমলা উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের গৃহদাহ আরও প্রকট হলো। কোন্দল এবং বিভক্তি বিদ্যমান থাকায় সহিংসতাও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে দিকে তৃণমুল নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে এমপির পরিবারের বা নিকট আত্বীয় কেউ প্রার্থী না হলেও ওই পদে ৭ জন প্রার্থীর মধ্যে মোফাক্কারুল ইসলাম পেলবকে এমপি সমর্থন দিয়েছেন। তৃণমুল নেতারা অভিযোগ করে বলেন, মোফাক্কারুল ইসলাম পেলব কিছুদিন আগেও ন্যাপের উপজেলা আহবায়ক ছিলেন। তাকে এমপি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যে যোগদান করিয়েছেন।
সুত্র মতে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান নীরেন্দ্র নাথ রায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ডিমলা সদর ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক। বাকী প্রার্থী যথাক্রমে মোঃ স্বপন, হামিদার রহমান, উত্তম কুমার রায়, আবু সাঈদ, সুজয় চন্দ্র রায় সকলেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। এ সকল প্রার্থীদের অনেকে বলেন এমপি আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মোফাক্কারুল ইসলাম পেলবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
ডিমলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম বলেন, নীলফামারী-১ আসনের (ডোমার-ডিমলা) সংসদ সদস্য ডিমলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আফতাব উদ্দিন সরকার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন। তিনি রিতিমত চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছে যেন সব পদ তার পরিবার নিবে। তিনি বিষয়টি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তবে এবিষয়ে দলীয় লিখিত কোন নির্দেশনা না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে ফেরদৌস পারভেজ বলেন, আমি অনেক আগে থেকে ভোটের মাঠে রয়েছি। জেলা পরিষদের সদস্য পদে রিজাইন করে এ নির্বাচনে এসেছি। আমি দলের কোন প্রার্থী না, স্বতন্ত্র প্রার্থী। ভোট থেকে সরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
অপরদিকে আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু বলেন, আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গত নির্বাচনে (উপজেলা) মনোনয়ন চেয়েছি, এমপি নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দেননি, আমি দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। দলীয় যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটির মধ্যে আমি পড়ি না। আমার পরিবার আলাদা, আমি এমপির প্রার্থী না।
এ বিষয়ে নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার বলেন, আমি তিনজনকেই নির্বাচন না করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তারা আমার কথা রাখেনি। কেন্দ্রীয় যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় সেটি কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিবে।