
কয়রা, খুলনা প্রতিনিধি
খুলনার কয়রায় সরকারি টাকায় স্থানীয় এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বাড়ি যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাষনের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় রাস্তাটির জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
ওই শিক্ষকের নাম আব্দুর রউফ। তিনি বেজপাড়া হায়াতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক (আইসিটি)। তাঁর পৈতৃক বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলায় হলেও বেশ কয়েকবছর আগে কয়রার মদিনাবাদ গ্রামের দালাল বাড়ি মোড় সংলগ্ন এলাকায় জমি কিনে বাড়ি নির্মান করে বসবাস করছেন।
এছাড়া আব্দুর রউফ একসময় কয়রা উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। তবে গত ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে তিনি কয়রা উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম রব্বানীর সহযোগী হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পান। সেই প্রভাব খাটিয়ে নিজের বাড়ির রাস্তা নির্মাণে সরকারি অর্থ বাগিয়ে নিয়েছেন বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ।
কয়রা উপজেলার ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) প্রকল্পের বরাদ্দপত্রে দেখা গেছে, কয়রা সদর ইউনিয়নের ‘দালাল বাড়ি মেইন রোড হতে আল আবরার মাদ্রাসা অভিমুখে রাস্তা মাটি ও ইট দ্বারা সংস্কার’ করার জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে ওই মাদ্রসার সামনে দিয়ে দালাল বাড়ি মেইন রোড পর্যন্ত পিচ ঢালাই রাস্তা থাকায় প্রথমে প্রকল্পের রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুম বিল্লাহ’র নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ প্রকল্প তো আমি দেইনি। উপজেলা থেকে দেয়া হয়েছে।আমাকে নামমাত্র সভাপতি রাখা হয়েছে। মূলত প্রকল্পটি আব্দুর রউফ মাষ্টারের বাড়ি যাতায়াতের জন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ওই এলাকার আবু সুফিয়ান নামে এক ব্যাক্তির বাড়ির পিছনে বালু ফেলে ইটের সোলিং দেওয়ার কাজ চলছে। আব্দুর রউফ নিজেই কাজটি করছেন। এরিমধ্যে প্রকল্পের অর্ধেক অর্থাৎ এক লাখ টাকাও ছাড় করেছে প্রশাসন।
শনিবার (১০ মে) সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আল আবরার মাদ্রাসা ও দালাল বাড়ি মেইন রোডের অবস্থান কয়রা-খুলনা প্রধান সড়কের পাশে। কর্মসূচির টাকায় নির্মিত রাস্তাটি ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমির উপর দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। রাস্তাটি শিক্ষক আব্দুর রউফের বাড়ির সামনে থেকে এসে তার প্রতিবেশি আবু সুফিয়ানের বাড়ির দেয়ালে এসে ঠেকেছে। দেয়ালের অপর পাশেই একটি নলকূপ রয়েছে। সেখান থেকে মূল সড়কের সাথে রাস্তা বের হওয়ার সুযোগ নেই।
তবে প্রতিবেশি আবু সুফিয়ান বলেন, এ মুহুর্তে আমার বাড়ির পেছনে দেয়াল পর্যন্ত রাস্তাটি হচ্ছে। পরে বাড়ির দেয়ালের সাথে একটি গেট তৈরি করে দেব ভাবছি। তখন আমার বাড়ির ভিতর দিয়ে বড় রাস্তায় যাওয়া যাবে।
জানতে চাইলে শিক্ষক আব্দুর রউফ বলেন, ‘রাস্তাটি আমার বাড়ির একার না। সেখানে একটি পারিবারিক কবরস্থান ও একটি পুকুর আছে। সেখান দিয়ে মাদ্রাসায় যাতায়াত করা যাবে। অপর পাশের দেয়াল ভেঙে দিয়ে মূল সড়কের সাথে সংযোগ হবে। আপনারা যা ভাবছেন তা নয়।’
মদিনাবাদ গ্রামের এমদাদুল হক বলেন, গত রমজানে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির ইফতার পার্টির দাওয়াতপত্রে আব্দুর রউফের ফেন নাম্বার ছিল। হয়তো প্রভাব খাটিয়ে সরকারি বরাদ্দ বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। এলাকার অনেক সড়ক আছে যেখানে জরুরি সংষ্কার দরকার। তবে সেখানে বরাদ্দ না দিয়ে একজন ব্যক্তির বসত বাড়ির রাস্তার জন্য সরকারি বরাদ্দ দেয়াটা সরকারি অর্থের অপচয়।
কয়রা উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব হেলাল উদ্দিন বলেন, আগে একসময়ে আব্দুর রউফ কয়রা উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন ঠিকই। কিন্তু পরবর্তীতে দলে সক্রিয় না থাকায় তাকে আর কমিটিতে রাখা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, ওই প্রকল্পটি কিভাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হবে। যা হয়েছে আমার অজান্তে। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি সেখানে পিচ ঢালাই সড়ক আছে, নতুন কোন প্রকল্পের দরকার নেই। সরকারি অর্থে কারো ব্যাক্তিগত কাজ করার সুযোগ নেই। আমি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে ওই প্রকল্প সংশোধন করার নির্দেশনা দিয়েছি।