
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে নৌ-পথের খনন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। ফলে প্রায় চার মাস থেকে চিলমারী-রৌমারী নৌ-পথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। জানা যায় গত বছরের ২২ ডিসেম্বর এই নৌ-পথে নাব্যতা সংকট দেখিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ করা হয়।
এরপর দিনের পর দিন নব্যতা ফেরাতে ড্রেজিং করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং সরকারী কোষাগার থেকে ব্যয় হয়েছে মোটা অংকের টাকা। এদিকে মাসের পর মাস ফেরি বন্ধ থাকার ফলে সরকারী আয় যেমন বন্ধ হয়েছে, পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়ছে নৌ-রুটের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সাথে যুক্ত মালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা। এদিকে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় বিআইডব্লিউটিসি প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা গচ্ছা দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, বিগত সরকারের সময়ে সাবেক নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী চিলমারী-রৌমারী নৌ-পথে ফেরি চলাচলের উদ্বোধন করেন। এর পর থেকে এই নৌ-পথে কুঞ্জলতা ও কদম নামের দুটি ফেরি পণ্যবাহী ট্রাকসহ যাত্রী নিয়ে নিয়মিত পারাপার করে আসছিল। ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা সংকটের কারণে গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে ওই নৌ-পথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করতে বিআইডব্লিউটিএ ব্রহ্মপুত্র নদের ২২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খনন শুরু করেন। খনন কাজে বিআইডব্লিউটিএ এর সরকারি ১টি খননযন্ত্র ও বেসরকারি ৫টি খননযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। ছয়টি খননযন্ত্র দিয়ে নাব্যতা সংকটের চেষ্টা করা হলেও ব্রহ্মপুত্র নদের স্রোত ও অতিরিক্ত বালুর কারণে খনন স্থায়ী না হওয়ায় গত ফেব্রুয়ারী মাসের ১৭ তারিখ বিআইডব্লিউটিএ বেসরকারি খননযন্ত্র বন্ধ করে দেন। এরপর রৌমারী ফেরিঘাটের কাছে সরকারি খননযন্ত্রে কিছু খনন কাজ চালু রাখা হলেও গত ২৭ মার্চ সেটি বন্ধ করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএ’র উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমে গিয়ে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি ৬টি খননযন্ত্র দিয়েও নাব্যতা সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে সরকারের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএস ও বিআইডব্লিউটিএ’র উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল এসে চিলমারী ও রৌমারী নৌ-রুটে কয়েকবার পরিদর্শন শেষে মন্ত্রনালয়ের অনুমতিক্রমে ব্রহ্মপুত্র নদের খনন কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। এরপর থেকে খনন কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে অতি সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রায় দুই ফিট পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অতি শীর্ঘই ফেরি চলাচল শুরু করা যাবে বলেও জানান তিনি।
চিলমারী থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস পত্রিকার সম্পাদক রিয়াদুল ইসলাম বাবু বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমে যায় এবং নাব্যতা সৃষ্টি হয় এটি আমাদের থেকে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ আরো ভালো জানে। তা জেনে তারা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করতো। সেটি না শুস্ক মৌসুমে নামে মাত্র ডেৃজিং করে তারা সরকারের অর্থ নষ্ট করছে। নদী পারের অনেক মানুষ বলে ড্রেজিং জাহাজ থেকে নাকি তেল বিক্রিও হয়। শুধু কি ব্রহ্মপুত্রে পানি কমেছে? নাকি দেশের সব নদ-নদীর পানি কমেছে। সেখানে যদি ফেরি চলাচল বন্ধ না হয় তাহলে চিলমারী-রৌমারী নৌ-রুটে ফেরী চলাচল বন্ধ কেন? আমরা উত্তরাঞ্চলের মানুষ দির্ঘদিন ধরে বৈশম্যের কারনে পিছিয়ে আছি। বৈশম্য এখনো শেষ হয়নি বলে এখন নাব্যতা সংকট দেখিয়ে সাড়ে তিন মাস থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চিলমারীর ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা সংকটে সাড়ে তিন মাস থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ আছে। এতে বিআইডব্লিউটিসির প্রায় প্রতিমাসে গড়ে সাড়ে ১২ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। এছাড়াও দীর্ঘদিন ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলে ফেরির যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে কয়েকবার বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান বরাবর ব্রহ্মপুত্র নদে খনন চালু রেখে ফেরি চলাচল উপযোগী করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা খনন কাজ শেষ করলেই আমরা ফেরি চালাতে পারবো। ব্রহ্মপুত্র নদের রৌমারী ঘাটে আমাদের দুটি ফেরি চলাচলের অপেক্ষায় রয়েছে।