শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
শ্রমিক দলের কমিটি অনুমোদন ও সালাম পিন্টু’র মুক্তি লাভে নাগরপুরে আনন্দ র‌্যালি লালমনিরহাটে স্বাস্থ্যকর শহর গ্রাম কর্মসূচি উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই কয়রায় কর্মী সম্মেলনে —ডা. শফিকুর রহমান দুই মাস ধরে অনুপস্থিত হাসপাতালের অফিস সহায়ক লালমনিরহাটে নিভৃত্য পল্লীতে পালিত হলো খ্রীষ্টিয় ধর্মের বড়দিন হলুদ সরিষা ফুল যেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলা ভূমি ভূয়া সাংবাদিক ও ভূয়া কর্ণেলকে গনপিটুনি সা’দ পন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে রায়পুরে বিক্ষোভ মিছিল কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু উপকূলীয় অঞ্চলে নারী-শিশুর শিক্ষা প্রসারে বড় বাঁধা জলবায়ু পরিবর্তন

স্বাধীনতার পর থেকে শুনি ব্রিজ হবে, হয়নি আজও।

  • Update Time : বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
  • ৫১ Time View

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ মোঃ গোলাম রব্বানী।

নীলফামারী সদরের লক্ষীচাপ ইউনিয়নের দেওনাই নদী পারাপারের জন্য ২০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। যুগের পর যুগ জনপ্রতিনিধিরা পাকা সেতুর প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে নিজেদের উদ্যোগে স্থানীয়রা বাঁশের সাকোটি তৈরি করেন। বর্তমানে সেটির অবস্থাও নড়বড়ে।

সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ও জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোটি। কোনো পাকা সেতু না থাকায় এ নদীর ওপর নির্মিত অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো দিয়ে আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষের যাতায়াত।

সরেজমিনে দেখা যায়, লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে সাইকেল ও মোটরসাইকেল নিয়ে হেঁটে সাঁকো পার হচ্ছেন। কৃষিপণ্য ও অন্যান্য মালামাল বহনে যেন ভোগান্তির শেষ নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক যুগ ধরে শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে যাচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু সেতুর দেখা মিলছে না। জনদুর্ভোগ কমাতে নদীর ওপর সেতু নির্মাণে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তারা।

স্থানীয়রা জানান, বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ, কাচারী, শিশাতলী, জংলীপাড়া, দুবাছুরি, বল্লমপাঠ, কচুয়া, দাঁড়িহারা ও রামগঞ্জ এবং জলঢাকা উপজেলার ডিয়াবাড়ী ও শিমুলবাড়ী গ্রামের মানুষ প্রতিদিন জেলা শহর, ডোমার উপজেলা শহর ও জলঢাকা উপজেলায় যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়া এই তিন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র ভরসা এই সাঁকো।

জংলীপাড়ার বাসিন্দা বিমল চন্দ্র রায় বলেন, “শুকনা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে কোনো রকম নদী পারাপার করা গেলেও বর্ষাকালে নদীতে বেড়ে গেলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এই স্থানে একটি সেতুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়ে কোনো কাজ হয়নি।”

ললিত চন্দ্র রায় একরাশ ক্ষোভ নিয়ে বলেন, “গত বছর আমার ছেলে বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। আমরা অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করি। কৃষকদের যত মালামাল এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে হয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমাগো দুঃখকষ্টের কথা কেউ শোনে না। বর্ষার সময় সাঁকোটি পার হওয়া অনেক কষ্টের। নদীভরা পানি থাকে। তখন সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যায়। আমাগো কষ্ট কেউ বুঝে না। বহু বছর ধরে শুনি, এখানে সেতু হবে। কিন্তু কখনো আর সেতু হলো না। আর হবে কিনা, সেটাও জানি না।”

বসুনিয়ারডাঙ্গা গ্রামের ধীরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, “স্বাধীনতার পর ভারত থেকে ফিরে আসার পর থেকে শুনছি ব্রিজটি হবে, কিন্তু আজও হয়নি। প্রতিবার ভোটের সময় ওই ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণের বিষয়টি ওঠে। ভোট ফুরালে আর কারও দেখা মেলে না। পাকা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে এলাকার সাংসদ, বিধায়কদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনকে বহুবার বলা হয়েছে। কিন্তু কারও কোনো হেলদোল নেই।”

মোটরসাইকেল আরোহী বিপ্লব রায় বলেন, “আমি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। আমার বাসা নদীর ওই পাড়ে। এখানে আমাকে প্রায়ই আসতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় এই বাঁশের সাঁকোটি। এখানে একটি পাকা সেতু হলে সবারই উপকারে আসবে।”

লক্ষীচাপ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শুভ রায় বলেন, “কষ্ট করে বিদ্যালয়ের সাঁকোর ওপর দিয়ে পারাপার হতে হয়। অনেক সময় পানিতে পড়ে আমাদের বইখাতা নষ্ট হয়ে যায়। বর্ষাকালেতো নদী জলে ভরে থাকায় প্রচণ্ড স্রোত থাকে তখন আর স্কুলে যেতে পারি না।”

ষাটোর্ধ্ব বয়সী অনাথ চন্দ্র রায় বলেন, “আমরা অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমাদের মান কি উন্নত হবে না। আমরা নিরুপায় বৃহৎ একটা এলাকা অবরুদ্ধ, যোগাযোগ বিছিন্ন সার্বিক উন্নয়ন থেকেও বঞ্চিত। আমরা ঊর্ধ্বতম কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি আমাদের এই বাঁশের সাঁকোর স্থানে যাতে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়।”

লক্ষীচাপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, “প্রতিদিন এই সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। ব্রিজটি হলে হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার পাশাপাশি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে আমি এলজিইডি অফিসে অনেকবার যোগাযোগ করেছি।”

নীলফামারী স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ কবির বলেন, “একটি প্রকল্প তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। ওই স্থানে একটি সেতু করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি খুব দ্রুত হয়ে যাবে।”

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © Doinik Prothom Barta
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102