শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

নাগরপুরে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গরু দিয়ে হালচাষ

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫
  • ১১২ Time View

হোসাইন মৃদুল:

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ কালের বিবর্তনের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে টাংগাইলের নাগরপুর উপজেলার গ্রামবাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহি হালচাষ। কোকিল ডাকা ভোরে কৃষকরা লাঙ্গল-জোয়াল কাঁধে মুখে পল্লীগীতি-ভাটিয়ালা গেয়ে মুখরিত করে পথাঞ্চল এক জোড়া গরু-মহিষ নিয়ে বেরিয়ে যেত মাঠে হালচাষ করার জন্য। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে কৃষকের লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ, ভাটিয়ালি-পল্লীগীতি গানের মধুর সুর মাতিয়ে রাখতো হাট-ঘাট ও মাঠ।

কৃষাণীরা সাজিয়ে নিয়ে যেত সকালের নাস্তা আলুবর্তা, ডাল, পিঁয়াজ কাঁচা মরিচ দিয়ে পান্তাভাত ও দুপুরে গরম ভাত। এমনই ছিল গ্রামবাংলার চিরাচরিত বিলুপ্তির পথে সেই অভুতপূর্ব দৃশ্য। এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে পড়ে না বললেই চলে।

সময়ের সাথে সাথে দিন বদলাচ্ছে। বদলাচ্ছে মানুষের জীবনধারা। যুগে এসে গেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিনে পাল্টে যাচ্ছে সব কিছুই। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কার হওয়ায় বর্তমানে কৃষি কাজেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। আধুনিকতার স্পর্শে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। নিত্য নতুন আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের জীবনেও এসেছে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে কৃষিতে। তাইতো কাঠের লাঙ্গলের পরিবর্তে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য আবিষ্কৃত হয়েছে সিডার, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারসহ নানান যন্ত্রপাতি। গরু দিয়ে এখন আর কৃষকদের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে জমি চাষ করতে মাঠে দেখা যায় না। কৃষক এখন ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার নিয়ে মাঠে গিয়ে অল্প সময়ে জমি চাষ এবং মই দিয়ে ফসল আবাদ করছেন। সে সময় গরু-লাঙ্গল ছাড়া জমি চাষ করার কথা চিন্তাই করা যেতো না। কৃষকের জমি চাষ আর মই দেওয়ার দৃশ্য সবার নজর কাড়তো।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নাগরপুর উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নের কলিয়া গ্রামের কৃষক হালিম মিয়া (৪০) গরু দিয়ে হালচাষ করছেন। বাঁশের ফালা দিয়ে তৈরি করা ধারালো লাঙ্গল কাঠের হাতল আর জোয়ালের মাধ্যমে গরুর কাঁধে বেধে দিয়ে জমিতে হাল চাষ করছেন তারা।

কৃষক হালিম মিয়া বলেন,বাপ দাদারাও গরু দিয়ে হালচাষ করতো, তাদের দেখে আমি করছি। গরু দিয়ে হালচাষ করলে ফলনও ভালো হয়। পোকায় আক্রমণ করে না,ধানও হয় বেশি। গরুর গোবর জমিতে পড়লে জৈব সার হয়। গতবছর গরু দিয়ে হালচাষ করেছিলাম ফলন ভালো হয়েছিল। এবছর ট্রাক্টর দিয়ে সরিষা আবাদ করেছিলাম। পোকায় সরিষা নষ্ট করে ফেলছে। আমাদের কৃষকদের জন্য গরু দিয়ে হাল চাষ করাটা উত্তম। আমরা ফসলও ভালো পাই।

একই এলাকার কৃষক জয়েন উদদীন বলেন,২৫ বছর ধরে গরু দিয়ে হালচাষ করি। গরু দিয়ে হাল চাষ করলে ধানের ফলন ভালো হয়। ধান বড় হয়,ধানে চিটা হয় না। ধান ফলন হয় বেশি তাই গরু দিয়ে হালচাষ করি। নিজের জমিও চাষ করি,অন্য কৃষকদের জমিও চাষ করি। প্রতি শতাংশ জমি হাল চাষের জন্য ১৫ টাকা করে নেই।

এ বিষয়ে উপজেলার বেশ কয়েক প্রবীণ কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গরুর লাঙ্গল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪৪ শতাংশ জমি চাষ করা সম্ভব। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরুর লাঙ্গলের চাষ গভীর হয়। জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও ফসলের চাষাবাদ করতে সার, কীটনাশকের সাশ্রয় হয়। কষ্ট হলেও গরু দিয়ে হাল চাষ করতে খুব ভাল লাগত। বেঁচে যেত অনেক দরিদ্র কৃষকের প্রাণ।

এখন মনে পড়লেই অনেক কষ্ট লাগে। ফিরে পাবনা আর সেই পুরনো দিনগুলো। এভাবেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

© All rights reserved © Doinik Prothom Barta
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102