কয়রা উপজেলা প্রতিনিধি:
খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম বাহারুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার ঢাকার হজরত শাহজালাল অন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে পাইকগাছা থানায় আনা হয়। পাইকগাছা থানার মামলার আসামি হওয়ায় তাকে পাইকগাছা আদালতে প্রেরণ করা হয়।
এর আগে গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর বাহারুল ইসলাম পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান। ওইদিন তার বাড়ি ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এলাকায় তার বিরুদ্ধে জমি ও ঘের দখল ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উজ্জল হোসেন জানান, বাহারুল ইসলামকে গ্রেফতারের খবর পেয়ে পাইকগাছা থানার একটি দল রাতেই ঢাকায় রওনা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে থানায় আনা হয়েছে। উপজেলার আগড়ঘাটা এলাকায় ট্রলারে হামলার অভিযোগে গত ২৬ আগস্ট ফসিয়ার রহমান নামে এক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। কয়রা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান বাহারুল ইসলাম দলের পদ পদবী কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদ ।
২০১৯ সালে কয়রা সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভিপি তালিকাভুক্ত ৪০ বিঘা জমি দখল করেন। এর শ্রেণি পরিবর্তন করে প্লট আকারে বিক্রি করেন। তার বিরুদ্ধে কয়রা সদরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ১০ কাঠা জমি দখলে নিয়ে দোকান ভাড়া দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কয়রা কপোতাক্ষ কলেজের সামনে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৬ শতক জমির ওপর পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করে হাসপাতাল বানিয়েছেন তিনি। তার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক,অধ্যক্ষ, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ নানা শ্রেণির মানুষ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কয়রা সদরে নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। তখন বাহারুলের নেতৃত্বে ২-৩ মাসের মধ্যে ৬০টি চিংড়িঘের দখল করা হয়। সংবাদপত্রে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বাহারুলের নেতৃত্বে কয়রায় প্রেস ক্লাবে হামলা করা হয়।
এতে দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক হুমায়ুন কবির ও সমকাল পত্রিকার প্রতিনিধি হারুনার রশিদ গুরুতর আহত হন। পরে তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হয়ে এককভাবে কয়রা নিয়ন্ত্রণ করেন। সেই থেকে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ২০১২ সালে মৎস্য ঘেরে লবণ পানি উত্তোলনের বিরোধিতা করায় বাহারুলসহ তার লোকজন সাংবাদিক শেখ জাহাঙ্গীর কবির টুলুকে কয়রা বাজারে মারপিট করে আহত করেন। ২০২২ সালে কয়রায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোনাপানির ঘের বন্ধের নির্দেশনা আসে।
এ সময় বাহারুল তার বাহিনী দিয়ে প্রথমে লোনাপানি উত্তোলনের পাইপ ভেঙে দেওয়া শুরু করেন। পরে ঘেরপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে লোনাপানি তুলে ঘের করার ব্যবস্থাও করে দেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানাবিধ অভিযোগ।