শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

লালমনিরহাটে শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১৩৮ Time View

মহম্মদ হানিফ মিয়া,লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার একটি বালিকা বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ উঠেছে একই বিদ্যালয়ের নাজিমুল ইসলাম খান নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে শ্লীলতাহানীর গুরুতর অভিযোগ তুলে বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত একাধিক ছাত্রীর অভিভাবকগণ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত ওই শিক্ষক লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার হুজুর উদ্দিন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক এবং পার্শ্ববর্তী হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি ২০০২ সাল থেকে ওই বিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে শিক্ষকতা করে আসছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক নাজিমুল ইসলাম খান দীর্ঘদিন ধরে তাঁর কর্মরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের সাথে প্রায়ই অশ্লীল কথা-বার্তা বলে উক্ত্যাক্ত করত। টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় নম্বর দেওয়ার কথা বলে ভয় দেখিয়ে একাধিক ছাত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ারও চেষ্টা করেন তিনি। অনেক ছাত্রী সামাজিকভাবে মান-সম্মানের ভয়ে এতদিন মুখ খোলেনি।সম্প্রতি শিক্ষক নাজিমুল তার দুইজন ছাত্রীর সাথে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করলে ভুক্তভোগি ছাত্রীদের বান্ধবীদের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি অনেকের অভিভাবক জানতে পারে। পরে বিষয়টি নিয়ে ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষযটি গোটা জেলায় চাউর হলে লম্পট এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোমবার দুপুরে ছাত্রী এবং অভিভাবকেরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগ দেয়ার পর পরই পরে ওই বিদ্যালয় থেকে শতাধিক ছাত্রী একটি মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি ও বিদ্যালয় থেকে অপসারণের দাবি করেন।

পরে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বিক্ষুব্ধ ছাত্রীদের সাথে কথা বলেন এবং ওই শিক্ষককে তাৎক্ষণিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিপাঠ প্রদানে নিষেধ করেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে ছাত্রীরা ফিরে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘শিক্ষক নাজিমুল ইসলাম খান একজন লম্পট, চরিত্রহীন ব্যক্তি। তিনি প্রায়ই আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সাথে অশ্লীল ও খারাপ কথা বলেন ও শরীরের বিভিন্ন স্পর্শ কাতর স্থানে হাত দেন।’

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক দাবি করেন, ‘বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকেরা ছাত্রীদের সাথে ওই শিক্ষকের শ্লীলতাহানীর ঘটনা দীর্ঘদিন থেকে জানলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি।’

অভিযুক্ত শিক্ষক নাজিমুল ইসলাম খান তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে
বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র। আমার সুনাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু শিক্ষকের স্বার্থে আঘাত লেগেছে, তাঁরা এ ধরণের ষড়যন্ত্র করে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছে। তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই অভিভাবকদের লেলিয়ে ষড়যন্ত্র করতে পারে।’

এ ব্যাপারে পাটগ্রাম হুজুর উদ্দিন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘শিক্ষক নাজিমুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীর ঘটনা কয়েকদিন আগে জানতে পেয়ে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।’

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, ‘পাটগ্রাম হুজুর উদ্দিন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীর অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রীরা আমার কাছে এসেছে। ঘটনা জানতে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে একটি তদন্ত কমিটি করতে বলা হয়েছে। ঘটনা প্রমাণ হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

© All rights reserved © Doinik Prothom Barta
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102