মোহাম্মদ হানিফ মিয়া,লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলরুটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার রেলওয়ে স্টেশনের পাশে প্রায় এক একর জায়গা দখল করে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদের ব্যক্তিগত বিনোদনের জন্য পার্কের আদলে গড়ে তোলা অবেধ্য স্থাপনা অবশেষে উচ্ছেদ করেছে রেলওয়ে কর্তপক্ষ। এর আগে গত বছর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ওই জায়গায় দুইবার যান। কিন্তু সাবেক মন্ত্রীর প্রভাব উচ্ছেদ অভিযানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ পুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদ দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে বিনোদন পার্কটি তৈরি করেন।
রেলওয়ের জায়গার ওপর অবৈধভাবে এ স্থাপনাটি গড়ে তুলতে রাকিবুজ্জামান জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ভিন্ন নামে ২০টি প্রকল্পের মাধ্যমে দেড় কোটি টাকাও তুলেছেন। সরকারি টাকায় তিনি ব্যক্তিগত ওই ব্যক্তিগত পার্ক তৈরী করেছেন নিজের বিনোদনের জন্য। যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ ছিলো।গত ৫ আগষ্ট গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে নুরুজ্জামান আহমেদ ও রাকিবুজ্জামান পলাতক আছেন। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই পৃথক একাধিক হত্যা মামলা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তুষভান্ডার রেলওয়ে স্টেশনের পার্শ্ববর্তী জায়গাটিতে এলাকার দরিদ্র লোকজন বসবাস করে আসছিল। পাশে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করতেন সেই দারিদ্র্য মানুষ গুলো। সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ পুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদ দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট উঠিয়ে দিয়ে জায়গাটি দখলে নিয়ে প্রথমে টিন দিয়ে ঘিরে ফেলেন। পরে জায়গাটির চারদিকে ইটের প্রাচীর দেওয়া হয়। মূল ফটকের ওপর বসান কংক্রিটের নৌকা। পাশে অবৈধভাবে তৈরি করেন আওয়ামিলীগ অফিস।
এছাড়া ভেতরের অংশে একটি বড় পুকুর কেটে এর চারপাশ ঘিরে তৈরি করা হয় সড়ক। বসানো হয় চেয়ার-টেবিল। রাকিবুজ্জামান সেখানে মাঝেমধ্যে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতেন সেখানে।
রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের শুরুতেই সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি এর তোয়াক্কা করেননি। নুরুজ্জামান আহমেদ ২০১৬ সালে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সালে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০২৪ সালের মন্ত্রিসভায় তিনি বাদ পড়েন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষি জমির লাইসেন্স নিয়ে শর্ত ভঙ্গ করে স্থাপনাগুলো তৈরি করেন। কয়েকবার তাকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি এ বিষয়টি আমলে নেননি। এছাড়াও আমাদের উচ্ছেদ অভিযান না করতে ক্ষমতা অপব্যবহার করেছেন। সকালে পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশূলক্ষলাকে নিয়ে রেলওয়ের জায়গার ওপর গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। তিনি বলেন, অনেক গরীব মানুষ রেলের জমিতে বসবাস ও দোকানপাট করে আছেন। তাদের প্রতি অন্যায় করে কোন অভিযান পরিচালনা করা হবে না। সরকারী নির্দেশ অনুযায়ী আজ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।