খুলনা ব্যুরো:
কয়রায় ছাত্রদল নেতার হামলায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের দুই নেতা হাসপাতালে।
খুলনার কয়রায় উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক সাব্বির হোসেন বাবু এবং আমাদী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ইয়াছিন আরাফাতের নেতৃত্বে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের দুই নেতার উপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই ঘটনায় খুলনা জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের যুগ্ন আহ্বায়ক তপন মন্ডল ও খুলনা জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সদস্য নিলাদ্রি সরদারকে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে ।বর্তমানে তারা কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
আহত হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নেতা ও স্হানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে,উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের হড্ডা মাঝেরচক সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী মন্দীরে প্রতি বছরের ন্যায় পাঁচ দিন ব্যাপী জগদ্ধাত্রী পূজার অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। ০৭ নভেম্বর শুরু হয়ে ১১ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল।০৭ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ভালোভাবে অনুষ্ঠান চলছিল।কিন্তু ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠানে হাজির হন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক সাব্বির হোসেন বাবু এবং আমাদী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত সহ তাদের সাথে থাকা প্রায় ৪০ জন যুবক।অনুষ্ঠানে পুরুষ দর্শনার্থী ও নারী দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা প্রবেশ পথের ব্যবস্হা ছিল।কিন্তু সাব্বির হোসেন বাবু ও ইয়াছিন আরাফাত সহ তাদের সাথে যুবকেরা নারী দর্শনার্থীদের প্রবেশ পথ দিয়ে প্রবেশ করতে যায়।
এ সময় নারী দর্শনার্থীদের সাথে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়।স্বেচ্ছাসেবকরা নারী দর্শনার্থীদের প্রবেশ পথ দিয়ে তাদের প্রবেশে বাধা দিলে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের কে তারা মারধর করে। তাৎক্ষণিকভাবে পূজা কমিটির লোকজন এসে পরিবেশ শান্ত করে। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে পরের দিন সাব্বির হোসেন বাবু ও ইয়াছিন আরাফাতের নেতৃত্বে ত্রিশটি মোটরসাইকেল বহর নিয়ে ওই এলাকায় মহড়া দেয়। এ সময় তাদের হাতে লোহার রড ও লাঠিসোঁটা ছিল। তাৎক্ষণিক ভাবে স্থানীয় হিন্দুরা স্হানীয় পুলিশ ফাঁড়িকে জানালে তারা এসে বাধা দেয়।
পুলিশের উপস্থিতিতে পূজা কমিটির লোকজনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।১৩ নভেম্বর সকালে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে কয়রা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।প্রতি মধ্যে চাঁদ আলী ব্রিজের উপর মন্দির কমিটির লোকজনকে পথরোধ করে হামলা করে সাব্বির হোসেন বাবু ও ইয়াছিন আরাফাতসহ ২০ জন যুবক।এতে আহত হন খুলনা জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের যুগ্ন আহ্বায়ক তপন মন্ডল ও খুলনা জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সদস্য নিলাদ্রি সরদার।
হড্ডা মাঝেরচক সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী মন্দীরের সভাপতি দেবদুদ মন্ডল বলেন,এবছর পূজা করবো না বলে ভেবেছিলাম। পরে কমিটির সবাই বসে পূজা করার সিদ্ধান্ত নেই। চার দিন অনুষ্ঠান ভালোভাবে চলছিল। শেষের দিন রাতে ছাত্রদলের কিছু ছেলেরা মহিলাদের প্রবেশ পথ দিয়ে অনুষ্ঠানে ঢুকতে চায়। এ সময় স্বেচ্ছাসেবকরা তাদেরকে বাধা দেয়। এ সময় তারা স্বেচ্ছাসেবকদের উপর রাগান্বিত হয়ে মারপিট করে। এবং মহিলাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। পরেরবদিন সাব্বির হোসেন বাবু ও ইয়াছিন আরাফাতের নেতৃত্বে ত্রিশটি মোটরসাইকেল বহর নিয়ে পুনরাশ এলাকায় মহড়া দেয়। এবং আমাদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।১৩ নভেম্বর সকালে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে কয়রা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে চাঁদ আলী ব্রিজের উপর মন্দির কমিটির লোকজনকে পথরোধ করে মারধোর করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক সাব্বির হোসেন বলেন,আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।এই ঘটনার দিন আমি ওই মন্দীরে যাইনি।ছাত্রদলের গ্রুপিং এর কারণে আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
আমাদী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেন,জগদ্ধাত্রী পূজায় মারামারির ঘটনায় আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই। গ্রুপিং এর কারণে আমার ঘাড়ে এই ঘটনার দোষারোপ করে বহিষ্কার করা হয়েছে।
কয়রা উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক আরিফ বিল্লাহ সবুজ বলেন, মন্দির কমিটি এ বিষয়ে আমাদের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। তদন্ত করে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সাপেক্ষে আমাদের ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত কে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক সাব্বির হোসেন বাবুর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ছাত্র দলের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জি এম ইমদাদুল হক বলেন, এই ঘটনায় তপন মন্ডল বাদী হয়ে এজহার দিয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।