মোঃ আবু বকর সিদ্দিক (অপু):
উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক শাহান শাহে তরিকত, ওলীয়ে-কামেল হযরত শাহ্ সূফী খাজাবাবা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (র.) এর ২০২৫ সালের পবিত্র ওরছ শরীফ রবিবার (৫ জানুয়ারি) মোতাবেক ২১শে পৌষ ১৪৩১ বাংলা সিরাজগঞ্জের বিশ্ব শান্তির মঞ্জিল এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত হবে।
সম্প্রতি বিশ্ব শান্তির মঞ্জিল এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফের সাজ্জাদ্দানিশীল পীর হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নুহু মিয়া ১১০ তম পবিত্র ওরছ শরীফের তারিখ ঘোষণা করেন।
পবিত্র ওরছ শরীফে ভারতের আসাম, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভক্ত-মুরিদানসহ সারাদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ লাখ মুসুল্লি, আশেকান, জাকেরান ও জাকেরান সমবেত হবেন। পবিত্র ওরছ শরীফ সফল করতে জেলা প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বিক সহযোগিতা করবেন। দরবার শরীফ কর্তৃপক্ষ পবিত্র ওরছ শরীফে সমবেত লাখ লাখ ভক্ত মুরিদান ও মুসুল্লিদের থাকা-খাওয়া, ওজু গোসলসহ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনের সু-ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
হযরত খাজাবাবা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (র.) ছাহেব তাঁর পীর ও মুর্শিদ হযরত শাহ্ সূফী সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদীবাগীর (র:) নির্দেশ ও মধ্যস্থতায় ১৯১৬ সালে তথা ১৩২২ বাংলা সালে সর্বপ্রথম পবিত্র ওরছ শরীফ উদযাপন করেন। সেই থেকে অদ্যবধি নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলমান আছে এই পবিত্র ওরছ শরীফ উদযাপন। আল্লাহর অশেষ রহমতে, নানান প্রতিকূলতা, যুদ্ধ-বিগ্রহ, দুর্যোগ কোন অবস্থাতেই তা স্থগিত বা বন্ধ থাকেনি। প্রথম ওরছ শরীফে খাজা শাহ এনায়েতপুরী (রহ:) আল্লাহু আকবার অঙ্কিত উজ্জল লাল বর্ণের পবিত্র ঝান্ডা মোবারক তাওহীদের শ্রেষ্ঠতম প্রতীক এবং রাসুলে পাক (সা.) সত্য তরিকা তথা দ্বীন ইসলামের বিজয়ের নিদর্শন স্বরূপ উত্তোলন করেছিলেন। আল্লাহ ও রাসুল (সা.) পাকের অপার্থিব নেয়ামত প্রাপ্তির সেই মহামিলনের পরম পবিত্র ওরছ শরীফের প্রবাহমান ধারা আজও এনায়েতপুর দরবার শরীফের চলমান আছে।
ভারতের প্রখ্যাত সাধক হযরত শাহ্ সূফী সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদিবাগী (র.) এর ইসলাম ও সূফীবাদের দর্শনে দিক্ষিত হন হযরত খাজাবাবা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (র.)। হযরত শাহ্সূফী সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদিবাগী (র.) এর ভারতের আসামসহ সারা বাংলায় ২৪ লাখ মুরিদ ও খেলাফত প্রাপ্ত ৫৬ জন খলিফার মধ্যে হযরত খাজাবাবা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (র.) সর্বশ্রেষ্ঠ খেতাব প্রাপ্ত হন।
শাহ্ সূফী হযরত খাজাবাবা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (র.) সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে খানকাহ প্রতিষ্ঠা করে দয়াল নবী রাসুলে পাক (সা.) এর সত্য তরিকা ও সূফিবাদের প্রচার শুরু করেন। পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কাজেও রেখেছেন অনন্য অবদান। এরমধ্যে খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, খাজা ইউনুছ আলী বিশ্ববিদ্যালয়, খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ, খাজা ইউনুছ আলী নার্সিং কলেজ, খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট, খাজা ইউনুছ আলী ল্যাবরেটরী স্কুল এ্যান্ড কলেজ, খাজা ইউনুছ আলী ক্যান্সার সেন্টার অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান।
শাহ্ সূফী হযরত খাজাবাবা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (র.) এর সংস্পর্শে এসে সত্য তরিকার দিশারি হিসেবে বাংলা-আসামসহ মোট ১ হাজার ২৫০ জন মুরিদকে তিনি খেলাফতের পবিত্র দায়িত্ব প্রদান করেন। তন্মধ্যে হযরত মাওলানা খাজা মুহাম্মদ ছাইফুদ্দীন (র.) (শম্ভুগঞ্জী পীর), ফরিদপুরের হযরত মাওলানা খাজাবাবা ফরিদপুরী (র.) (আটরশির পীর), হযরত মাওলানা সুলতান আহমেদ (র.) (চন্দ্রপাড়ার পীর), হযরত মাওলানা মকিম উদ্দিন (র.) (টাঙ্গাইলের প্যারাডাইস পাড়ার পীর), কুমিল্লার ইসলামাবাদ, মাতুয়াইল, জামালপুরের সাধুপাড়া মোসলেম নগর, যশোরের ঘুণী দরবার শরীফ, ভারতের আসামের দলগাও দরং খগজানী পাক দরবার শরিফ (গণি খলিফার দরবার) অন্যতম। বাংলা-আসামের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই মহান আউলিয়ার খলিফাদের দরবার ও খানকা শরীফ, প্রচারিত হচ্ছে ইসলামের শ্বাশত সত্য সুন্দর অমিয় দর্শন ও নকশেবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া তরিকার দাওয়াত।
এই মহান সাধক শাহ্ সূফী হযরত খাজাবাবা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (র.) বাংলা ১৩৫৮ সনের ১৮ই ফাল্গুন ওফাত বরণ করেন।