খুলনা ব্যুরো:
খুলনার কয়রা-বেতগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ আংশিক সম্পন্ন করে মোট বরাদ্দের অর্ধেকেরও বেশি অর্থ তুলে নিয়ে চলে গেছে ঠিকাদার। ফলে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কাজের নামে সড়কের বিভিন্ন স্থানে খুড়ে ফেলে রাখায় গর্তে বৃষ্টিতে পানি জমে এ মুহুর্তে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় মানুষকে। ঘটছে দুর্ঘটনা।
খুলনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক কাজী মোজাহারুল হক বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীনের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর কাজের সাইট থেকে কৌশলে নির্মাণ সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সওজ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে ১ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে কয়েক দফা সময় বাড়ানোর সাথে বরাদ্দও বাড়ানো হয়। প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দৈঘের্যর প্রকল্পটির শুরুতেই বরাদ্দ ছিল ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। পরে তা বাড়িয়ে ৩৭৯ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার টাকা করা হয়। এখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ ছাড় করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল উপকূলীয় জনপদের মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা। এ প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে ছিল সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতিকরণ, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সরলিকরণ, কালভার্ট নির্মাণ, রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
সওজের উপসহকারি প্রকৌশলী আজিম কাওছার জানিয়েছেন, প্রকল্পের সর্বশেষ মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পুনরায় আবেদন করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পে ৬৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ভৌতিক অগ্রগতি ও ৫৭ দশমিক শূণ্য ৫ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে। এ অবস্থায় তারা কাজ করবেন না বলে গত ১৫ আগষ্ট চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটির কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, আওয়ামীলীগ সরকারের প্রভাবশালী নেতার প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্পের শুরুতেই নানা অনিয়ম করে প্রতিষ্ঠানটি। তারা ৩০টি বাঁক সরলিকরণের কাজ বাদ রেখে কিছু স্থানে কার্পেটিংয়ের কাজ সম্পন্ন করে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় সেসব স্থানে এর মধ্যে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ৬৪ কিলোমিটার দৈঘের্যর সড়কের অন্তত ৩০টি স্থানে প্রায় ২০ কিলোমিটার কাজ অসমাপ্ত রাখায় সেখানে কাদা-পানি জমে একাকার হয়ে গেছে। ফলে ওই সড়ক দিয়ে এ মুহুর্তে চরম ঝঁুকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে মানুষকে। কাজ শেষ না করে সড়ক উন্নয়নের টাকা তুলে নিয়ে ঠিকাদার পালিয়েছেন বলে অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
কয়রা বাজার কমিটির সভাপতি সরদার জুলফিকার বলেন, সড়ক উন্নয়ন কাজ অসমাপ্ত রেখে টাকা তুলে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া অন্যায়। এতে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি অর্থ ফেরৎ নেওয়া জরুরি। একই সাথে জনগণের ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্নের দাবী জানান তিনি।
কাজ ফেলে চলে যাওয়ার বিষয়ে জানতে ঠিকাদার কাজী মোজাহারুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
প্রকল্প পরিচালক ও সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দীন বলেন, কাজ অসমাপ্ত রেখে ঠিকাদার চলে যাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে অধিদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি। একই সঙ্গে প্রকল্পের কাজ চলমান রাখার বিষয়টিও জানানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত আসলে পরবর্তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ছবি আছে – খুলনার কয়রা-বেতগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ কাজ ফেলে রাখায় গর্তে পানি জমে চলাচলে ভোগান্তি চরমে।