লালমনিরহাটে ৬ মাস পর নিহত পল্লী চিকিৎসক হরেন্দ্রনাথ সেনের লাশ উদ্ধারের পর নিহতের পুত্র কর্তৃক আদালতে মামলা দায়ের, অতপর হরেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় স্ত্রী মাধবী রাণী (৪৫) ও মামলার অপর আসামী মাধবী রাণীর মেয়ে তাপসী রাণী (২৫)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার (২২ মে) রাতে সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।নিহত পল্লী চিকিৎসক হরেন্দ্রনাথ সেন ওই গ্রামের মৃত হেমন্ত সেনের ছেলে। গ্রেফতার মাধবী রাণী হরেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় স্ত্রী এবং তাপসী রাণী নিহত হরেন্দ্রনাথ ও মাধবী রাণীর মেয়ে।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, নিহত পল্লী চিকিৎসক হরেন্দ্র নাথের প্রথম স্ত্রী মারা যান ১৯৯৮ সালে। পরে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন মাধবী রানী সেনকে। দ্বিতীয় স্ত্রীর নিয়ন্ত্রনে সংসার চলে যাওয়ার পর ২০১২ সালে নিহতের প্রথম স্ত্রীর সন্তান প্রশান্ত ও প্রদীপকে বাড়ি থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়। এরপর দুই ভাই কোনদিনই আর বাড়িতে ফিরতে পারেননি। দ্বিতীয় স্ত্রীর নিয়ন্ত্রনে ছিলেন হরেন্দ্র নাথ সেন। নিজের ছেলে সন্তান না থাকায় সতীনের ছেলেদের বঞ্চিত করে মাধবী রানী সেন কৌশলে স্বামীর কাছ থেকে সব জমি নিজের নামে লিখে নেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গত বছর ১৩ ডিসেম্বর মাধবী রানী অন্য আসামীদের সহযোগিতা নিয়ে হরেন্দ্র নাথ সেনকে কৌশলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মরদেহটি ঘরের মেঝের ওপর রেখেছিলেন। এসময় সকল আসামীরা বাড়ির ভেতর ছিলেন। বাড়ির প্রধান দরজা বন্ধ রাখায় গ্রামের লোকজন বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে পারেননি। এরপর ওইদিন বিকেলে সদর থানা পুলিশ হরেন্দ্র নাথ সেনের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানায় একটি হত্যা মামলার অভিযোগ দেয় হরেন্দ্রনাথের পুত্র প্রশান্ত সেন। কিন্তু পুলিশ মামলা না নিলে গত ১৩ মে বিমাতা তথা নিহত হরেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় স্ত্রী মাধবী রাণী সহ আটজনকে আসামী করে আদালতে একটি হত্যা মামলা করে। লালমনিরহাট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেলাল হোসাইনের আদালত ওইদিনই মামলাটি রেকর্ড করে ৫ দিনের মধ্যে আইনী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশকে। আদালত থেকে মামলার কপি পাওয়ার পর বুধবার রাতে মাধবী ও তাপসীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মামলার বাদী নিহতের সন্তান প্রশান্ত কুমার সেন বলেন,”থানায় অভিযোগ দিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন থানায় গিয়েছিলাম কিন্তু পুলিশ আমার অভিযোগ আমলে নেয়নি। থানায় আইনী সহযোগিতা না পাওয়ায় ৬ মাস পর আদালতের আশ্রয় নিয়েছি।” “আমাদের পিতাকে পুর্ব পরিকল্পিতভাবে সুকৌশলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের বিমাতা ষড়যন্ত্র করে বাবার কাছ থেকে বসতভিটাসহ প্রায় ৭ বিঘা জমি লিখে নিয়েছেন”, তিনি বলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাশেদুল ইসলাম বলেন, গেল বছর ১৩ ডিসেম্বর থানায় একটি সাধারন ডায়রী (জিডি) করে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ভিসারা রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি। এ কারনে এ ঘটনায় থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়নি। “আদালতের নির্দেশে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। দ্রুত বাকী আসামীদেরও গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।