সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সখীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু টাঙ্গাইলের স্রোতস্বিনী সুন্দরী খাল যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে নাগরপুরের পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বর্তমান অবস্থা রায়পুরে মাদক বিক্রয় বাধা দেওয়া মারধর ১জন আহত লালমনিরহাটে সাংবাদিকের উপর হামলাকারী মাইদুল গ্রেফতার নতুন বছর কে স্বাগত জানাতে চলছে চাঁদাবাজির হিরিক হাজারীবাগে লালমনিরহাটে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের গন সমাবেশ অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইলে নবগঠিত হলো শ্রমিক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি জাতীয় ইমাম পরিষদের পৌর শাখার পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন; সভাপতি আশরাফুল-সেক্রেটারি কাদির রায়পুর উপজেলার ২ নং ইউনিয়ন বিএনপি সহ সকল অঙ্গ সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

সুপারি চুরির অপবাদে” দুই শিশুকে হাতপা বেঁধে মুখে গামছা ও টেপ লাগিয়ে পাশবিক নির্যাতন

মোঃ হানিফ মিয়া,লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
  • Update Time : শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
  • ৪৮ Time View

আপনার পায়খানা খাব, আপনি যা বলবেন তাই করবো, আমরা চুরি করিনি-আমাদের ছেড়ে দিন, এভাবেই আসিফ (৮) ও শরিফুল(৯) নামে দুই নির্যাতিত শিশু বাঁচার আকুতি জানালেও কানে নেয়নি সাগর ভ্যান্ডার নামে এক নরপশু বখাটে যুবক। তারপরেও সুপারি চুরির সন্দেহে দুই শিশুকে বেদম পিটিয়েছে। এ ঘটনায় নির্যাতিত শিশু আসিফের মা আসমা বেগম লালমনিরহাট সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

শুক্রবার (১৭ মে) রাতে এমনই এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ওকড়াবাড়ির খামারবাড়ি এলাকায়।

নির্যাতিত শিশু আসিফ ওই এলাকার মোশারফ হোসেন ও শরিফুল একই এলাকার আমিনুর ইসলামের ছেলে। তারা দুইজনেই হারাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্র। অভিযুক্ত সাগর ভ্যান্ডার ওই এলাকার মৃত-আইয়ুব আলী ভেন্ডারের ছেলে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলের দিকে আসিফ ও শরিফুল ওকড়াবাড়ি বাজার সংলগ্ন তাদের নিজ এলাকায় খেলা করছিল। এ সময় সাগর ভ্যান্ডার সুকৌশলে শিশু আসিফ ও শরিফুলকে ডেকে নিয়ে যায়। প্রথমে তাদের একটি ভুট্টা ক্ষেতের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তাদের দুজনকে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে পরে সেখান থেকে তাদেরকে সাগর তার বাড়িতে নিয়ে হাত দিয়ে বেধড়ক কিল ঘুসি মারার পর বাড়িতে থাকা একটি লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি অভিযুক্ত সাগর। এসময় দুই শিশু আসিফ ও শরিফুল তার পায়ে ধরে বাঁচার আকুতি করে বলে চাচা আপনার পায়খানা খাব, আপনি যা বলবেন তাই করব, আমাদের আর মারবেন না, এভাবে মারলে আমরা মরে যাব চাচা, আমাদের ছেড়ে দিন চাচা, আমরা আপনার সুপারি চুরি করি নাই চাচা। তবুও তার মনে কোন দয়া মায়া আসে নাই। পরে সে দুই শিশুকে হাতপা বেঁধে মুখে গামছা ও টেপ লাগিয়ে মোটরসাইকেলের রডের তালা দিয়ে পেটাতে থাকে। এক সময় শিশু দ্বয় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অজ্ঞান হলে সাগর অবস্থা বেগতিক বুঝে সটকে পড়ে।

পরে এলাকাবাসী শিশু দুটিকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। বর্তমানে আহত দুইশিশু লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের ৩য় তলায় ৪২নং বেডে চিকিৎসাধিন রয়েছে।

শনিবার (১৮ মে) সকালে সাংবাদিকরা সরেজমিনে ঘটনা স্থলে গেলে নির্যাতিত দুই শিশুর মা ও এলাকাবাসি জানায়, সাগর ভ্যান্ডার হারাটী ইউনিয়নে একজন মাদকসেবি ও বখাটে যুবক। ছোট বেলায় তার বাবার মৃত্যু হওয়ায় এবং বাবার শাসন না পাওয়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বৃদ্ধা মা কোনভাবেই তাকে মাদক সবন থেকে ফেরাতে পারেনি। এক সময় সাগর তার পিতার ভ্যান্ডারী পেশায় নিয়োজিত হয়। ভেন্ডারী পেশায় ইনকাম বেশি হওয়ায় মাদক সেবনের পাশাপাশিএকের পর এক কুকীর্তি ঘটাতে থাকে। এলাকায় সাগর মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত আছেন বলে অনেকেই জানান।

তারা আরও জানান- আসিফ ও শরিফুল সুপারি চুরি করছে, তার কোন প্রমাণ বা অভিযোগ না থাকার পরেও শুধুমাত্র সন্দেহের উপর ভিত্তি করে সে নির্মম ভাবে শিশু দুটিকে পেটায়। যা যৌক্তিক তো নয়ই বরং গুরুতর অপরাধ। এলাকাবাসী এই ঘটনাসহ সাগরের সকল অপকর্মের বিচার চায়।

সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, আসিফ ও শরিফুল হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। তাদের চেখে মুখে ভয়ের আতঙ্ক। প্যান্ট খুলে দেখায় মাইরের চিহ্ন। তাদের পিঠে, বুকে ও পশ্চাৎদেশে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। সাবলীলভাবেই বলে নির্যাতনের করুণ বর্ননা। তারা বলে- সাগরের বিচার হোক।

শিশু আসিফ সাংবাদিকদের বলে- “আমরা দুজনেই ৩য় শ্রণিতে পড়াশুনা করি। আমরা কোন সুপারি চুরি করি নাই। কিন্তু সাগর আমাদেরকে কায়দা করে তুলে নিয়ে যায়। আমি মাইর সহ্য করতে না পেরে তাকে বলেছি- আমি আপনার পায়ে পড়ি, আপনার গু (পায়খানা) খাব তবু আমাদের ছেড়ে দিন। আরেক শিশু শরিফুল বলে- “আমাদের গলায় ছুরি রেখে আমরা সুপারি চুরি করেছি স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু আমরা তো চুরি করি নাই। গরীব বলে আমরা কি মানুষ নই। আমরা এর বিচার চাই।“

আসিফের মা আছমা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন- এই লম্পট সাগর মানুষ নয় তাকে পশু বললেও ভুল বলা হবে। সে একটা পশুর চেয়েও অধম। আমরা রাতে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। আমি আমার শিশু সন্তানের উপর এই পাষবিক নির্যাতনের সঠিক বিচার চাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাগরকে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা তিনি সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে ফোন কেটে দেন এবং তার ফোনটি বন্ধ করে রাখেন।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © Doinik Prothom Barta
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102