বগুড়ার শিবগঞ্জে প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া সাত বছরের শিশু হালিমা খাতুনকে ধর্ষণের পর ধামাচাপা দিতেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে জুুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (১) এর বিচারক আব্দুল মোমিনের কাছে দোষ স্বীকার করে তার ১৫ বছর বয়সী চাচাতো ভাই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
নিহত হালিমা শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা লস্করপুর গ্রামের হাবলু মিয়ার মেয়ে ও স্থানীয় কেজি স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত শুক্রবার দুপুর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। তিনদিন পর গতকাল সোমবার বিকেলে ওই গ্রামে তার চাচা আনিছার রহমানের বাড়ি থেকে বস্তাবন্দি মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
বগুড়ার পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, গ্রেপ্তার কিশোর (১৫) স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। স্বীকারোক্তিতে সে বলেছে, গত শুক্রবার দুপুরে টেলিভিশন দেখার কথা বলে শিশু হালিমাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। কেউ না থাকার সুযোগে নিজ শোবার ঘরে নিয়ে সে হালিমাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে নিজেকে বাঁচাতে শিশুটি তার হাতে কামড় দেয় ও কান্নাকাঁটি করতে থাকে। ঘটনা ফাঁস হওয়ার ভয়ে হাত দিয়ে গলাটিপে সে শ্বাসরোধ করে হালিমাকে হত্যা করে। পরে ঘটনা জানাজানির ভয়ে শিশুটির মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে ঘরের ভেতরেই বস্তাবন্দি করে রেখে দেয়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার শিশুটি নিখোঁজের পর স্বজনরা সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করে। শনিবার শিশুর বাবা হাবলু পুলিশকে জানায়। রোববার ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নিয়ে গ্রামের তিনটি পুকুরে সন্ধান চালায় পুলিশ। পরে গতকাল সোমবার হালিমার চাচা আনিছারকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে তার বাড়িতে তল্লাশি করে বস্তাবন্দি অবস্থায় হালিমার লাশ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকেই আনিছার, তার স্ত্রী রাহেনা ও কিশোর ছেলেকে আটক করা হয়। ওই রাতেই শিশুর বাবা হাবলু থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আটক কিশোর হালিমাকে ধর্ষণের পর হত্যার দায় স্বীকার করে। এছাড়াও ছেলেক বাঁচাতে শিশুটির লাশ গুম করার চেষ্টার দায় স্বীকার করে আনিছার ও তার স্ত্রী। পরে আজ বিকেলে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়।
শিশুটির বাবা হাবলু মিয়া মুঠোফোনে সমকালকে বলেন, আমার ছোট্ট বাচ্চাটাকে এইভাবে কষ্ট দিয়ে নিজের ভাতিজা মেরে ফেলবে স্বপ্নেও ভাবিনি। সেখানে আমার ভাইয়ও সেই অপরাধে সহযোগিতা করেছে। এই কষ্ট কেউ পূরণ করে দিতে পারবে না। দ্রুত আমার মেয়ের সাথে হওয়া অপরাধের সর্বোচ্চ বিচার দাবি করছি।
পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার আরও বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে হালিমার মরদেহ আজ দুপুরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর দ্রুত আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।