সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখক আরিফ রহমান এমন একটি দাবি প্রচার করেছেন, যা ইতিহাসের পরিমণ্ডলে শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয়, বরং সুস্পষ্টভাবে অসত্য। তিনি লিখেছেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নাকি ছারছীনা দরবারের পীর “নারীদের গনিমতের মাল” আখ্যা দিয়ে ফতোয়া দিয়েছিলেন!এই অপপ্রচার ইতিহাসের দলিল নয়, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কল্পকাহিনি, যার সঙ্গে সত্য ও গবেষণার কোনো সম্পর্ক নেই।
মুক্তিযুদ্ধ একটি জাতির স্বপ্ন, সাহস ও আত্মত্যাগের মহাকাব্য। এর প্রতিটি অধ্যায় হাজার প্রমাণ, সাক্ষ্য, নথি ও আন্তর্জাতিক গবেষণায় সমৃদ্ধ। ছারছীনা দরবারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আরিফ রহমান উত্থাপন করেছেন তা এসব নথির একটিতেও স্থান পায়নি। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়, গণহত্যা আর্কাইভ, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোপন নথি কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের মৌখিক ইতিহাস কোথাও নেই এই কথিত “ফতোয়া”-র অস্তিত্ব। এটি ইতিহাস নয়, এটি বিদ্বেষের সৃষ্টি।
বাংলার দক্ষিণাঞ্চলে ছারছীনা দরবার শতাব্দীর পর শতাব্দী মানবসেবা, আধ্যাত্মিক শিক্ষা, শান্তির চর্চা ও সমাজসংস্কারের আলোকশিখা হিসেবে কাজ করেছে।এ দরবারের ঐতিহ্য হলো মানবিকতা নারীর নিরাপত্তা, দরিদ্রের সেবা, শিক্ষার প্রসার এবং সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সাহসী অবস্থান।অতএব, এই পবিত্র ঐতিহ্যকে নারী বিদ্বেষের মতো কদর্য এক অপবাদে দাগানো শুধু অন্যায় নয়, এটি ইতিহাসের প্রতি এক সুস্পষ্ট অবমাননা।
অবাক হওয়ার বিষয় যারা একাত্তরের প্রকৃত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের নাম উচ্চারণে সংকোচ বোধ করেন, তারা আজ নির্দোষ আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠানের দিকে আঙুল তুলতে দ্বিধা করছেন না।যেন সত্য নয়, মনগড়া গল্পই এখন তাদের নতুন হাতিয়ার।
আরিফ রহমানের লেখা এই বানোয়াট অভিযোগের উদ্দেশ্য একটাই—সম্মানিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ছোট করা, এবং বিভক্ত সমাজে নতুন উত্তেজনা ছড়ানো।কিন্তু ইতিহাস এমন সহজেই বিকৃত হয় না। সময়ের আদালত কখনোই মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেয় না।
ছারছীনা দরবার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এমন প্রমাণ নেই। বরং সেই অগ্নিগর্ভ সময়ে দরবার হয়ে উঠেছিল বহু আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের আশ্রয়স্থল। যে দরবারের ইতিহাস দয়া, ধর্মীয় শাশ্বততা ও মানবিকতার আলোয় দীপ্ত তাকে নারী নির্যাতন বা বর্বরতার সঙ্গে যুক্ত করা এক ধরনের নৈতিক অপরাধ।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কারও ব্যক্তিগত গল্প নয় এটি এক জাতির সম্মিলিত স্মৃতি, রক্ত, অশ্রু ও মর্যাদার সার্বজনীন দলিল। এ ইতিহাসের ওপর কাদা ছোড়া মানে স্বাধীনতার চেতনায় আঘাত করা।
আরিফ রহমানের লেখাটি তাই ইতিহাস নয়,এটি আবেগ ঠেলে দেওয়া এক অসতর্ক শব্দচালনা, যা সমাজের বিভ্রান্ত ও অশিক্ষিত অংশকে উত্তেজিত করে তোলার উদ্দেশ্যে রচিত।
সত্যকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টার বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।কারণ মিথ্যা যতই প্রচারিত হোক ইতিহাসের দর্পণ শেষে সত্যকেই প্রতিফলিত করে।
লেখক কলামিস্ট ও শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো,মিশর
সম্পাদক ও প্রকাশক:- মোঃ আবির ইসলাম
নির্বাহী সম্পাদক:- জামিল চৌধুরী
বার্তা সম্পাদক:- আরিফুল ইসলাম
হেড অফিস: ৪৭,পুরানো পল্টন আরবান পল্টন ভিউ কমাশিয়াল কমপ্লেক্স (৫ম তলা)
নিউজ মেইল: dainikprothombarta@gmail.com
যোগাযোগ: ০১৬৪৩-০৩১৩৭২/০১৮৬৮-৮৪৫৫৯৬
দৈনিক প্রথম বার্তা কর্তৃপক্ষ
Design And Develop By Coder Boss