
টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরের মাশরুম চাষ করে লাভবান হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা মোঃ সোহাগ (২৪) হোসাইন। তিনি উপজেলার আনাই তারা ইউনিয়নের আগ-চামাড়ী গ্ৰামের মজিবর রহমানের ছেলে। সোহাগ মিয়া ২০২২ সালে শখেরবসে বাড়ির পরিত্যক্ত ঘরে মাশরুম চাষ শুরু করেন।এরইমধ্যে উপজেলা ছাড়িয়ে জেলার মধ্যে একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা ও মাশরুম চাষি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
সোহাগ হোসাইন জানান, শখের বশে প্রথমে ৩০ হাজার টাকা পুঁজি বিনিয়োগ মাশরুম চাষ শুরু করেন। যদিও তিনি এ বছর বিএসসি অনার্স গনিত বিভাগের ছাত্র। মাশরুম মৃতজীবী ছত্রাক যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। মাশরুমের কোষ প্রাচীর হচ্ছে কাইটিন নামক পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। এই কাইটিন নামক পদার্থটি মানবদেহের চর্বি ডিটারজেন্ট মত কাজ করে। মাশরুম সুষম খাদ্য ও সুপার ফ্রুট। এই মাশরুমের মধ্যে সকল উপাদান হিউজ পরিমাণ আছে। মাশরুম শিশু থেকে শুরু করে গর্ভবতী মহিলা বয়স্ক সকলেই খেতে পারবে। এই মাশরুম ছোট বাচ্চাদের দাঁতের মাড়ি, হাড় মজবুত করে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য আদর্শ খাবার।
তিনি আরো বলেন, এই মাশরুম চাষ করে খুব সহজেই অল্প পুঁজিতে ভালো লাভবান করা যায়। স্বল্প জায়গায় অল্প খরচে যেকোনো মানুষ একদম ছোট বাচ্চা পর্যন্ত এই মাশরুম চাষ করতে পারবে। মাশরুম চাষ করে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। বাংলাদেশে এই মাশরুমের মধ্যে অনেক প্রজাতি আছে। তার মধ্যে ওয়েস্টার মাশরুম খুব সহজেই চাষ করা যায়।ওয়েস্টার মাশরুমের কিছু জাত আছে যা শীতে অনেক ভালো চাষ হয় এর মধ্যে রয়েছে HK, WS , OS ইত্যাদি ।
PO2 সারা বছর চাষ করা যায় তবে শীতে ভালো চাষ হয় ।
শীতের সময়ে মাশরুমের খরের সিলিন্ডার বেস্ট। খরের সিলিন্ডার খুবই সহজলভ্য যা গ্ৰাম্য অঞ্চলের ধানের খর থেকে আসে এছাড়া কাঠের গুঁড়ি, গমের ভুসি, ধানের তুষ ইত্যাদি দিয়ে মাশরুমের স্পন তৈরি করা হয়। আমরা যারা ইয়ং জেনারেশন আছি তারা বেকার না থেকে মাশরুম চাষ করতে পারেন।
উল্লেখ্য, এই মাশরুম সবজি করে, স্যুপ করে, চপ করে, ভাজি করে, নুডুলসের সাথে, গোস্তের সাথে, মাছের সাথে, আচার করে খেতে পারবেন। মাশরুমের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এইটা অর্গ্যানিক খাবার। এই মাশরুমের মধ্যে কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না।
এছাড়াও, এই মাশরুম চাষ কেউ যদি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষ শুরু করে সেক্ষেত্রে সে শতভাগ লাভবান হবে। যদিও আমাদের দেশে প্রতিদিন ১৫০০০ মেট্রিক টনেরও বেশি মাশরুমের প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী আমাদের বাংলাদেশে মাশরুম উৎপাদন নেই।
চাষের জন্য প্রথমে এক থেকে ২ ইঞ্চি মাপের খড় কেটে জীবাণুমুক্ত করার জন্য ৬০-৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম পানিতে ৬০-৮০মিনিট ডুবিয়ে নিন অথবা ব্লিচিং পাউডার ও চুন মেশানো পরিষ্কার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ফোটানো বা ভেজানোর পরে পানি ঝরিয়ে নিয়ে হালকা শুকিয়ে নিতে হবে তারপর হালকা চুন মিশিয়ে ১২/১৮ সাইজের একটি পলিব্যাগের মধ্যে দুই ইঞ্চি পুরু করে খড় বিছিয়ে তার উপর ব্যাগের ধার ঘেঁষে মাশরুম বীজ বা স্পন ছড়িয়ে দিতে হয়। বীজের উপরে আবার খড় ও খড়ের উপর আবার বীজ, এভাবে প্রায় ৪-৫ টা স্তর তৈরি করে পলিব্যাগের মুখ কয়েকটা প্যাঁচ দিয়ে কষে বন্ধ করে দিতে হয়। খড় বিছানোর সময় প্রতিবার হাত দিয়ে ভালো করে চেপে দিতে হবে, যাতে খড়ের ভিতর হাওয়া জমে না থাকে। এরপরে প্যাকেটে দশ থেকে বারোটা ছোট ছোট ছিদ্র করে তুলা দিয়ে ছিদ্রের মুখ বন্ধ করে দিলে স্বাভাবিক হাওয়া চলাচল বজায় থাকবে, আবার তুলা থাকায় ধুলাও ঢুকতে পারবে না। প্যাকেটটি সাত থেকে দশ দিনের জন্য কোনও অন্ধকার জায়গায় রেখে দিতে হবে।
কয়েক দিনের মধ্যেই সেই প্যাকেটে বীজের জায়গায় সাদা আস্তরণ দেখা দেবে, যাকে মাইসেলিয়াম বলে। অল্প কয়দিনের মধ্যে পুরো ব্যাগটাই মাইসেলিয়ামে ভরে গেলে তুলা সরিয়ে ফেলে আরও কয়েকটি ছিদ্র করে ব্যাগটিকে কিছুটা আলোর মধ্যে রাখতে হবে। তবে সরাসরি রোদে নয়, ঘরের ভিতর যেটুকু আলোয় বই পড়া যায়, তেমন আলোয়। বাতাসে আর্দ্রতা বুঝে প্রয়োজন মাফিক প্যাকেটের উপরে মাঝে মাঝে পানি স্প্রে করবেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই ছিদ্র দিয়ে মাশরুমের পিনহেড উঁকি দেবে। সাধারণত পঁচিশ থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে মাশরুম খাওয়ার মতো পরিণত হয়ে যায়। একটি ব্যাগ থেকে ৩ থেকে ৪ বার ফলন পাওয়া যায়।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, অন্ধকার হলেও জায়গাটিতে যেন হাওয়া চলাচল করে। জায়গাটি যাতে পরিষ্কার ও পোকা-মাকড়মুক্ত থাকে, সে খেয়ালও রাখতে হবে। মাছি কিন্তু মাশরুম চাষে ভয়ানক ক্ষতি করে। তাই মাছির আক্রমণ থেকে রক্ষা করা জরুরি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা “মাহমুদা খাতুন ” বলেন, মাশরুম ‘গরীবের মাংস’ হিসেবে খ্যাত। এটি খেতে সুস্বাদু। এটি ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন একটি সবজি জাতীয় ফসল, যা বর্তমানে অনেকেই চাষ করছেন। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এবং স্বাদ ভালো হওয়ায় এটি মানুষের নিকট সমাদৃত হয়েছে। বর্তমান বাজারে দিন দিন মাশরুমের চাহিদা বাড়ছে। তাই বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু হয়েছে। বহু বেকার যুবক-যুবতী মাশরুম চাষ করে এরইমধ্যে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হচ্ছেন।