আরিফ হোসেন রুদ্র (রায়পুর,লক্ষ্মীপুর):
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আরিফুর রহমান আরিফ (৪৬) হত্যা ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আশিকুর রহমান (৩৫), রাহাত হোসেন তন্ময় (২৫), পরশ চৌধুরী শ্রাবন (২৯) ও এহতেশামুল হক নিশাত (২৫)। আজ শনিবার (৪ জানুয়ারি) ভোররাত ৩টার দিকে ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানার দাপুনিয়া খেজুরতলা মোড় এলাকা থেকে পিবিআই সদস্যরা তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে গত বুধবার (১ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার পিঠাসুতাগামী পাকা রাস্তার পাশে ধানেেত অজ্ঞাত হিসেবে আরিফের মরদেহের সন্ধান মেলে। পরদিন বৃহস্পতিবার নিহতের স্ত্রী আয়শা আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে তারাকান্দা থানায় মামলা করেন।
নিহত আরিফুর রহমান আরিফ রায়পুর উপজেলার লামচরী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি কেরোয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পর পর ৪ বারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি (ইউপি সদস্য) ছিলেন। আরিফ এর আগে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সদস্য ছিলেন। স্থানীয় জোড়পোল বাজারে তার ফার্নিচার ও রড-সিমেন্টের দুটি দোকান রয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া আশিকুর রহমান মাদারীপুরের শিবচর গ্রামের সোলায়মান মিয়ার ছেলে। তন্ময় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার কুমারগাতি গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে। শ্রাবন রংপুরের কোতোয়ালী থানার গণেশপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন চৌধুরীর ছেরে। নিশাত তারাকান্দার রূপচন্দ্রপুর গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন জানিয়েছেন- গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে নেওয়া হলে তাঁরা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। অপহরণ কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিও ঢাকা থেকে জব্দ করা হয়েছে।
পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার জানান, আসামীরা অপহরণ চক্রের সদস্য। আসামী শ্রাবন ঢাকায় অবস্থানরত আরিফুর রহমান আরিফের তথ্য সংগ্রহ করে। তাকে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সাজায়। ২৫ ডিসেম্বর শ্রাবন ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আসে। ৩১ ডিসেম্বর তাঁর বন্ধু তন্ময় ও নিশাতকে নিয়ে ঢাকার মিরপুর চলে যায়। সেখানে গিয়ে আসামী শ্রাবন সুকৌশলে আরিফুর রহমানকে মিরপুর ১ নম্বর এলাকা থেকে ডেকে নেয়।
ভিকটিম আরিফুর রহমান সেখানে আসামাত্র আসামী শ্রাবন, আশিক, তন্ময় ও নিশাত মিলে তাঁকে ধরে ফেলে। প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে তাদের পূর্ব হতেই ভাড়া করে রাখা হায়েস গাড়ীতে উঠতে বলে। আরিফুর রহমান গাড়ীতে উঠামাত্রই তাঁরা ময়মনসিংহের দিকে রওনা করে। আরিফকে বাধ্য করে তার স্ত্রীর কাছে মোবাইলে কল করতে ও টাকা পাঠানোর জন্য এসএমএস করতে। বিকাশ নম্বর হিসেবে আসামী আশিকের একটি নম্বর দেয়।
গাজীপুরে জ্যামে গাড়ী আটকে গেলে আরিফ নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলে আসামীরা অপহরণের বিষয়টি যাতে প্রকাশ না পায় সে জন্য ভিকটিমকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে আসামীরা ভিকটিমকে হত্যা করে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে যায়।