সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সখীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু টাঙ্গাইলের স্রোতস্বিনী সুন্দরী খাল যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে নাগরপুরের পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বর্তমান অবস্থা রায়পুরে মাদক বিক্রয় বাধা দেওয়া মারধর ১জন আহত লালমনিরহাটে সাংবাদিকের উপর হামলাকারী মাইদুল গ্রেফতার নতুন বছর কে স্বাগত জানাতে চলছে চাঁদাবাজির হিরিক হাজারীবাগে লালমনিরহাটে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের গন সমাবেশ অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইলে নবগঠিত হলো শ্রমিক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি জাতীয় ইমাম পরিষদের পৌর শাখার পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন; সভাপতি আশরাফুল-সেক্রেটারি কাদির রায়পুর উপজেলার ২ নং ইউনিয়ন বিএনপি সহ সকল অঙ্গ সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

সাংবাদিকতা পেশার ঝুঁকি

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪
  • ২৭ Time View

মাসরিকুল হাসান সোহেল:

সাংবাদিকদের মাঠপর্যায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ঝুঁকি আরও বেশি। ব্যক্তিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আক্রোশের শিকার হতে হয়, অনেকের জীবনও চলে যায়। সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের খুন করে।

রাজনীতিবিদ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, আমলা সুযোগ পেলে সাংবাদিকদের নামে মামলা ঠুকে দেয়, হয়রানি করে। আবার কথায় কথায় রাজপথে সাংবাদিক পেটায়। সাংবাদিকদের মূল্যায়ন সমাজ ও রাষ্ট্রে নেই বললেই চলে। একজন সাংবাদিকের নিষ্ঠা, শ্রম, সততা, আদর্শবাদিতা ও জীবন-ঝুঁকি অবলীলায় ঢাকা পড়ে যায়।
মফস্বল এলাকায় সাংবাদিকতা করার ঝুঁকি রাজধানীর তুলনায় অনেক বেশি এবং এগুলো অনেকটা নিত্যদিনের চিত্র হয়ে উঠেছে।

প্রতিনিয়তই মফস্বলে সাংবাদিকদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়, কখনো যারা সরকারি দল তাদের লোকের হাতে, কখনো বিরোধী দলের লোকের হাতে। পক্ষে গেলে শুভকামনা, বিপক্ষে গেলে বিভিন্নরকম হুমকি থাকে।
মফস্বল এলাকায় জমিজমা বা দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করতে গেলেই কেউ না কেউ শত্রু হয়ে যাবে এবং প্রতিশোধ নিতে চাইবে।

প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তারা যেকোন কিছু কাজ করতে পারে। এর মধ্য দিয়েই সাংবাদিকদের কাজ করতে হয়।
“সমালোচনা সহ্য করা যায়, কিন্তু নির্যাতন সহ্য করা যায় না। যখনই নির্যাতন আসে তখন আসলে সাংবাদিকদের করার কিছু থাকে না।আগে টেলিফোনে হুমকি হতো, এখন হুমকিগুলো প্রকাশ্যে হচ্ছে, এটা কোন কোন ক্ষেত্রে মৌখিকভাবে হুমকি দেয়া হয়, কখনো গোষ্ঠীগতভাবে হুমকি দেয়া হয়, কখনো রাজনৈতিক পক্ষ থেকে হুমকি পান। নানা রকম চাপের মধ্যে থাকেতে হয় একজন সাংবাদিককে।

স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যবসায়িক শক্তি অনেক সুসংগঠিত যারা সাংবাদিকদের জন্য প্রতিকূল অবস্থা তৈরির জন্য দায়ী। এমন পরিস্থিতিতে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের ডিজিটাল নিরাপত্তা ও আইসিটি আইন। এই আইনের আওতায় হাজার হাজার মামলা হয়েছে। এর একটা বড় অংশ হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে।

“কোন কিছু ঘটলে সাংবাদিকে সঙ্গে এই মামলাগুলো করে দেয়া হচ্ছে। তার মানে স্থানীয় শক্তির সাথে এই আইনের একটা ভীতি কিন্তু সেখানে তৈরি হয়েছে।”

প্রেসক্লাবের মতো সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে রাজনৈতিক ও আদর্শিক কারণে বিভক্তি, নাগরিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও দুর্বলতার কারণেও সাংবাদিকদের ঝুঁকি বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেতন ও চাকরী সংক্রান্তও একটা ঝুঁকি রয়েছে মফস্বল সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে। জীবন জীবিকার জন্য মফস্বল সাংবাদিকদের আরো নানা ধরণের কাজের সাথে যুক্ত হতে হয়। কারণ তারা যে ধরণের বেতন পান, সুযোগ সুবিধা পান সেটা দিয়ে তার জীবন যাপন করাটা সম্ভব হয় না। এটা উপজেলা পর্যায়ে খুবই বড় বাস্তবতা। এর নিচের পর্যায়ে এই বাস্তবতা আরো প্রখর।

এ দেশে বরাবরই নানাভাবে হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কাউকে ছাড় না দিয়ে একজন সাংবাদিককে ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখতে হয়। আর তাতেই ক্ষেপে যান সংশ্লিষ্টরা। কখনো জীবন কেড়ে নেওয়া, কখনো শারীরিকভাবে হামলা, আবার প্রায়ই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে সাংবাদিকদের। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন এখন শুধু রাজধানী ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কারণে-অকারণে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে, সাংবাদিক খুন হচ্ছে।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা থেকে শুরু করে সাংবাদিক হত্যাকান্ডের একটি ঘটনার সঠিক বিচার হয়নি। খবর সংগ্রহকারী সাংবাদিকরা নিজেরাই খবর হচ্ছেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে বাংলাদেশে অন্তত ৩৫ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। বাকি আড়াই বছরে আরও অন্তত ১০ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন।
সামনের দিনে মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকরা এ চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকির মুখে কতটা টিকে থাকতে পারবেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে এ তথ্যও রয়েছে, গত কয়েক বছরে অনেক সাংবাদিক পেশা ছেড়েছেন, অনেকে দেশ ছেড়েছেন এবং ছাড়বেন।

পেশাগত অনিশ্চয়তা এবং নানা টেনশন, তার ওপর সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ পুরো পেশাকে সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে। এ সংকট দেশকেও সংকটে ফেলবে। তাই সময় এখন গণমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখার, বাঁচিয়ে রাখার।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © Doinik Prothom Barta
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102