
মাহাবুল ইসলাম পরাগ,গাজীপুর:
গাজীপুরের কালিয়াকৈর, টঙ্গী ও বাঘের বাজার এলাকায় তিনটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর, টঙ্গী ও বাঘের বাজার এলাকায় তিনটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এসময় কারখানার শ্রমিকেরা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক কিছু সময় অবরোধ করে রাখেন।
এতে যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। খবর পেয়ে যৌথ বাহিনী সদস্যরা শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেন এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তিনজনকে আটক করেন।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা হাজিরা বোনাস বাৎসরিক ছুটিসহ ১২ দফা দাবিতে ঘটনা নিয়ে অসন্তোষের জেরে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু বন্ধ ঘোষণার পরও আজ সকালে শ্রমিকেরা কারখানার সামনে অবস্থান করে। একপর্যায়ে কিছু শ্রমিক কারখানা বন্ধ থাকার পরও কারখানার ভেতরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এদিকে তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে টঙ্গীর পশ্চিম থানার খাঁ পাড়া এলাকায় অবস্থিত সিজন ড্রেসেস লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সোমবার সকাল ৭টায় কারখানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী মানুষজন। গাড়ি না পেয়ে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছান। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সড়ক অবরোধ করা গার্মেন্টস শ্রমিকেরা বলছেন, তিন মাস ধরে গার্মেন্টসের মালিকপক্ষ বেতন দিচ্ছে না। বাকি রয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের ওভারটাইমের টাকা, তিন বছরের ছুটির টাকাও। বারবার আশ্বাস দিয়েও তারা শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাঁদের। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেককেই অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।
কয়েকটি দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকেরা।
কয়েকটি দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকেরা। ছবি: ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনএদিকে সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেনরিফিউ গার্মেন্টসের শ্রমিকরা ১২ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। সোমবার সকালে শ্রমিকেরা ১২ দফা জানিয়ে কারখানার ভেতরে অবস্থান নেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে তারা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিলসহ ৮টি দাবি মেনে নেয়।
১২টি দাবি থেকে ৮টি দাবি মেনে নিলেও বাকি চারটি দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়ে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন। এতে সকাল থেকেই মহাসড়কের ওই অংশের আশপাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার বাসসহ ব্যক্তিগত যান আঞ্চলিক সড়ক হয়ে চলাচল করছে। পরে দাবি মানার আশ্বাস পেয়ে দুপুর ১২ টার দিকে শ্রমিকেরা সড়ক থেকে সরে যান।
গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের বাঘের বাজার জোনের পরিদর্শক সুমন মিয়া বলেন, সকাল থেকে শ্রমিকেরা মহাসড়কে আন্দোলন করছেন। এতে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে মাওনা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের জন্য শ্রমিকদের বলা হয়েছে।
শিল্প পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।