মাসরিকুল হাসান সোহেল :
২০২৪-এর কোটা সংস্কার আন্দোলন হলো বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি আন্দোলন। ২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন আবার নতুনভাবে আলোচনায় আসে।[২২] ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছিল।[২৩] ঐ পরিপত্রের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সকল কোটা বাতিল করা হয়েছিল।
ফলাফল উল্লেখ্য, রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সম্প্রতি নিজের চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে প্রসঙ্গক্রমে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়টিও উঠে আসে। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না।
২১ জুলাই ২০২৪ সালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে ও ৭% কোটা রেখে সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩% নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে ২৩ জুলাই সুপ্রীম কোর্টের রায় অনুযায়ী সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে কোটা সংস্কার আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলনে পরিণত হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আবু সাঈদের হত্যার পর কোটা আন্দোলন সারা দেশে এবং দল মত নির্বিশেষে সবার মাঝে ছড়িয়ে পরে।
অভিভাবক ছোট শিশু থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নিহতদের ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে গ্রেফতার ও বিচার। শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা, মাসিক ভাতা ও তাদের পিতা–মাতার মতামতের ভিত্তিতে একজন সদস্যকে চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া।
সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করা এবং ছাত্র সংসদ চালু করা, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষার্থীকে সব ধরনের রাজনৈতিক, আইনি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মাধ্যমে একাডেমিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা,যারা শেখ হাসিনার পতনে মুল ভূমিকা রেখেছেন, নেতৃত্ব দানকারী সম্মিলিত নেতৃত্ব শেখ হাসিনা নিজেই
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল[১১]
ওবায়দুল কাদের
সাদ্দাম হোসেন[১২]
মাইনুল হোসেন খান নিখিল[১৩] হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি মৃত্যু: অন্তত ৭৫৭ জন , মতান্তরে ৮৩৫ জন(হিউম্যান রাইটস ওয়াচ)[১৪]
আহত: ৬,৭০০+ জন[১৫]
গ্রেফতার: ১০,৫০০+ জন [১৬]
মৃত্যু: ১ জন ছাত্রলীগ কর্মী এবং ৪৭ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য[১৭][১৮]
আহত: ১১১৭+ জন পুলিশ সদস্য[১৯] এবং বহু ছাত্রলীগ কর্মী
৫ জন সাংবাদিক নিহত এবং ২৫ জন আহত[২০][ জন এই আন্দোলনে মৃত্যুবরণ করেছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ”এই ১৫ বছরে বেশিরভাগ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারা নিজেরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের যে ক্ষমতার ভিত্তি, তার কোনটাই টেকসই ছিল না। কারণ তারা জনগণ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন।”
”ফলে মানুষের একটা ক্যাটালিস্ট বা স্ফুলিংগের দরকার ছিল। সেটাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দিয়ে শুরু হয়েছে, তিনি বলছেন।
ফলে সরকার বিরোধী একটা আন্দোলন যখন জোরালো হয়ে ওঠে, সেই আন্দোলন ঘিরেও মানুষের ক্ষোভের জন্ম হয়, তখন সেনাবাহিনী, কারফিউ বা পুলিশের পরোয়ানা না করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষ গণভবনের উদ্দেশ্যে পথে নেমে এসেছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ”১৫ বছরের একটা পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, জিনিসপত্রের দাম, গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনা, লুটপাট, ব্যাংকিংয়ের অনিয়ম সব কিছু নিয়ে ক্ষুব্ধ মানুষ কোটা আন্দোলনের একটা উপলক্ষ্য করে একটা পরিবর্তনের আশায় নেমে এসেছে।”
সেই আন্দোলনে অংশ নেয়া তাহমিনা আক্তার বিবিসিকে বলেছিলেন, ”আমার সরকারি চাকরির দরকার নেই, চাকরির আবেদন করার মতো বয়সও নেই। কিন্তু আমাদের সাথে যে মিথ্যাচার করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে, আমাদের যে ভয়ভীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে, সেটার অবসান চাই। সেটার জন্যই আজ আমি পথে নেমে এসেছি।”
গণঅভুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতের পেছনে আরো কিছু কারণ দেখছেন বিশ্লেষকরা।
৫ই আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ভারতে পলায়ন
পক্ষ
আন্দোলনকারীগণ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা
কয়েকজন আইনজীবী এবং বার কাউন্সিলের সদস্য
প্রবাসী বাংলাদেশী
সমর্থন:
বিএনপি[২]
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী[৩]
জাতীয় পার্টি(জাপা)[৪]
গণতন্ত্র মঞ্চ
১২ দলীয় জোট
জাসদ (ইনু)
বাংলাদেশ জাসদ (নুরুল আম্বিয়া) [৫]
বাংলাদেশ ন্যাপ
বাম গণতান্ত্রিক জোট
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ[৬]
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ[৭]
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ
জাকের পার্টি
বিশ্ব সুন্নী আন্দোলন ও ইনসানিয়াত বিপ্লব
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি
হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ শাখা
আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান:
বাংলাদেশ সরকার
বাংলাদেশ পুলিশ
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী[৮]
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ[৯]
বাংলাদেশ আনসার
আওয়ামী লীগ
ছাত্রলীগ
যুবলীগ
কোটা পুনরুদ্ধার আন্দোলনকারীরা
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ[১০]।