মোঃ হানিফ মিয়া,লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের এপিএস মিজানুর রহমান। তিস্তা নদীর পাশে অবৈধভাবে তৈরি করেছেন বালু মহাল। মালিক হয়েছেন কয়েকশ কোটি টাকার ও শত একর জমির। বিদেশেও পাচার করেছেন কোটি কোটি টাকা। তার স্ত্রী তমা এলাকায় ‘ফার্স্ট লেডি নামে পরিচিত। আর তমার গাড়িতেই পাচার করা হতো মদ, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক।
পরো নাম মিজানুর রহমান মিজান।লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বাসিন্দা কাঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের ছেলে মিজান। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির সুবাদে মিজান হয়েছিলেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের এপিএস।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশ থেকে পালিয়ে এখন স্ত্রী তমা ও তার সন্তানসহ আমেরিকার সিকাগোতে আছেন মিজান। লালমনিরহাটের কাকিনার বানিনগরে তার শ্বশুরবাড়ি। তার স্ত্রী তমা তার সম্পর্কে চাচি হয়। তার চাচার সাতে চাচি আমেরিকাতেই থাকতেন। চাচির সাথে দির্ঘদিন সম্পর্ক করার পর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে মিজানকে তাকে বিয়ে করেন চাচি তমা। বর্তমানে তার স্ত্রী এলাকায় ‘ফার্স্ট লেডি নামে পরিচিত। কালীগঞ্জের কাকিনা মহিপুর এলাকায় তমার গাড়িতে পাচার করা হতো মদ, ফেনসিডিলসহ মাদক। পরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিপুল মাদকসহ গাড়িটি আটক করে ডিবি পুলিশ। মিজানের শ্যালক মাদক নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এপিএস মিজানের ক্যাশিয়ার বলে পরিচিত রেল কর্মচারী (টিটি) জাকির হোসেন। এ ছাড়াও সোনা পাচারের ব্যবসা রয়েছে তার। এই সোনা পাচারে তার পার্টনার হিসেবে ছিলেন মহিষখোচা কলেজের শিক্ষক সেফাউল। মিজান প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গেও জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তার সহযোগী ছিলেন প্রশ্ন চক্রের হোতা এমডি মিজান। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
অভিযোগ রয়েছে, মিজান অনামিকা ট্রেডার্স এর নামে মহিষখোচা তিস্তা বাঁধ নির্মাণে ১০ কোটি টাকার কাজ জোড় করে টেন্ডারে নিয়ে নিম্নমানের কাজ করেন। যা ৬ মাসেই লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
আদিতমারীর মহিষখোচা গ্রামের একাধিক মানুস জানান, মিজানের বাবার জমি নদীতে ভেঙে যায়। তাদের তেমন কিছুই ছিল না। এখন অঢেল সম্পত্তির মালিক তার পরিবারের লোকজন।
জানা গেছে, সমাজকল্যাণমন্ত্রীর এপিএস থাকাকালীন আদিতমারীর মহিষখোচার কচুমুড়া এলাকায় ২০ বিঘা, বারঘরিয়া বালুঘাটে ১৫ বিঘা, গোবর্ধন চরে ৫০ বিঘা জমি ক্রয় করেন মিজান। মহিষখোচা বাজারে কোটি টাকার ওপরে জমি কেনেন। মন্ত্রীর এপিএস হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মারধর করা হতো। তিস্তা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে ১৫ বছরে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মিজান।
আরো জানা গেছে, মিজানের ছোটভাই এরশাদুল হক চাকরি করেন হাতিবান্ধায় ভূমি অফিসের পিয়ন পদে। ২০তম গ্রেডে চাকরি করে ১০ হাজার টাকা তার বেতন। বড়ভাই মন্ত্রীর এপিএস হওয়ায় চাকরি না করেও প্রতিমাসে মাসে তুলতেন বেতন। পিয়ন থেকে তিনিও এখন কোটি টাকার মালিক। মহিষখোচা বাজারে বড় বড় গোডাউনে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার ভুট্টা, তামাক ও পাট।এসব বিষয়ে মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বর্তমানে তিনি আমেরিকায় থাকায় তাকে পাওয়া যায়নি।
কুড়িগ্রামের দুদক উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ হয়েছে মিজানের নামে। তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে তার বিরুদ্ধে।