মো: মাসরিকুল হাসান সোহেল,গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর:
আজ ১ সেপ্টেম্বর। দিনটি আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস হিসেবে স্বীকৃত। একসময় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল চিঠি। কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চিঠি লেখার মাধ্যমেরও পরিবর্তন হয়েছে।
সময়ের স্রোতে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনমান। সেইসাথে চিঠি লেখার জায়গাটি এখন দখল করেছে মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তা, ই-মেইল, টুইটার বা ফেসবুকের চ্যাটিং। প্রিয়জনদের সঙ্গে বলার জন্য কেউ কেউ বেছে নিচ্ছেন ইমু, ভাইভার, হোয়াটসঅ্যাপ বা স্কাইপির মতো প্রযুক্তি।
বহু আগে ইংরেজ কথাকার সমারসেট মম যা বলেছিলেন, বর্তমানের বাস্তবতায় সেটাই সত্যি। চিঠি লেখা আসলেই এক হারিয়ে যাওয়া শিল্প। ‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’, এই গানের বোল বাঁধতে গিয়ে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ কি কোনো দিন ভেবেছিলেন যে মানুষ একসময় শুধুই আকাশের ঠিকানায় অর্থাৎ অন্তর্জালে (ই-মেইলে) চিঠি লিখবে!
এখন এই চিঠি প্রায় বিলুপ্তই বলা চলে—
প্রিয়জনের একটি চিঠির জন্য কত অধীর আগ্রহে পথ চেয়ে বসে থাকত মানুষ। প্রিয় মানুষটার একটু খোঁজখবর জানার ব্যাকুলতায় হৃদয় যখন অস্থির হতো, তখন হয়তো ডাকপিয়নের সাইকেলের বেলের আওয়াজ প্রশমিত করতো সেই অস্থিরতা।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবন মোবাইলের দখলে যাওয়ার আগে নিজের মনোভাব, আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি—সব কিছুর একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি। ব্যক্তিগত সমস্যা কিংবা পারিবারিক জীবনের চাওয়া-পাওয়াগুলোও স্থান পেত সেখানে।চিঠির ইতিহাসটা বেশ পুরনো। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম ডাক সার্ভিসের মাধ্যমে চিঠিপত্র বিলি শুরু হয় ১৫৪১ সালে।
প্রথম দিকে বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজের চিঠিপত্র চালাচালির জন্য এই সেবা থাকলেও পরবর্তী সময়ে জনসাধারণের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। নিকট অতীতে পিতার কাছে টাকা চেয়ে, বোনের বিয়েতে দাওয়াত দেওয়ার জন্য বন্ধুর কাছে, অনুজের ভালো ফলাফলের জন্য শুভ কামনা জানিয়ে কত শত ধরনের যে চিঠি দেওয়ার চল ছিল তার ইয়ত্তা নেই। এমন একটি সময় ছিল যখন আপনজনের কাছে চিঠি লিখে তার জবাব আসবে কবে সেই আশায় তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করত সবাই। ছেলেটি শহরে পড়াশোনা করছে, মেয়েটি শ্বশুরবাড়িতে কেমন আছে—এসব জানার জন্য চাতক পাখির মতো পথের পানে চেয়ে থাকতে হয়েছে মা-বাবাকে।
দূর-দূরান্ত থেকে কত শত আনন্দ বেদনার খবর বয়ে নিয়ে আসতো এই চিঠিতে। প্রিয়জনের চিঠি, সন্তানের চিঠি, মা-বাবার চিঠি, স্বামী-স্ত্রীর চিঠি, প্রেমিকের চিঠির অপেক্ষার প্রহর গুনতো প্রেমিকা।চিঠি নাম লিখিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। হারিয়ে গেছে হলুদ খামের চিঠির যুগ। চিঠির সঙ্গে হারিয়ে গেছে এক সময়ের জনপ্রিয় খোলা ডাক বা পোস্টকার্ড।
মেঠোপথ ধরে সাইকেলের বেল বাজিয়ে ঝোলায় চিঠি নিয়ে খাকি পোষাকে আসছে ডাকপিয়ন। দেখেইে প্রেমিকা, গৃহবধূ ও বাবা মা ছুটে যাচ্ছে পিয়নের কাছে। ছেলের চিঠি পেয়ে বাবা মায়ের চোখে আনন্দের অশ্রু, বাইরে থাকা স্বামীর চিঠি হাতে পেয়ে উচ্ছাসে কোমর দুলিয়ে দৌড়ে গিয়ে গাছের তলে বসে খাম খুলে আবেগে উদ্বেলিত হয়ে পড়ছে বধূ। গ্রাম বাংলার এমন চিরায়ত দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না।
মনের ভাব বিনিময়ের জন্য চিঠি ও পোস্টকার্ড হরহামেশা ব্যবহার হলেও নতুন প্রজন্মের অনেকেই যানে না একসময়ের জনপ্রিয় যোগাযোগের মাধ্যমটি ইতোমধ্যে পুরনো জৌলুস হারাতে বসেছে ডাক বিভাগ।
মো: মাসরিকুল হাসান সোহেল
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর।