মোঃ হানিফ মিয়া,লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের বিজয়ের পর লালমনিরহাটে উল্লাশিত এবং বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা আওয়ামীলীগ নেতার বাড়িতে আগুন দিতে গিয়ে আগুনে পড়ে ৬ছাত্রের ভস্ম হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (৫ আগষ্ট) সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পাশে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন খানের ৫তলা বিশিষ্ট বাড়িতে আগুন দিতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে শহরের খাতাপাড়া এলাকার সাইদুর রহমান মিঠুলের ছেলে শ্রাবণ, হাড়িভাঙ্গা এলাকার মৃত জাহেদুল ইসলাম খোকনের ছেলে তন্ময়, বানভাষা এলাকার রেজাউল করিম রেজার ছেলে রাজিব, পিংকির মোড় এলাকার বিজিবি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের ছেলে রুশো এবং নবীনগর এলাকার সেকেন্দারের ছেলে জনিসহ ৫জনের এর পরিচয় নিশ্চিত হলেও বাকি এক জনের পরিচয় যানা যায়নি।
জানাযায়, দির্ঘদিন বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের পরে সোমবার দুপুরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা সহ গোটা লালমনিরহাট জেলার মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়ে। ছাত্র জনতার এই বিজয়ে জেলার গ্রাম, পাড়া, মহল্লা থেকে শুরু করে জেলার বিভিন্ন জায়গায় জনসাধারন আনন্দ মিছিল বাহির হয়। এই আনন্দ মিছিলে হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেয়। ছাত্রদের এই বিজয়ে বিক্ষুব্ধ কিছু ছাত্র আওয়ামীলীগের নেতাদের বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে নিজেদের ক্ষোভ নিবারন করে।
এরই ধারাবাহিকতায় সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন খানের আলিশান ৫তলা বিশিষ্ট বাড়িতে অগ্নিসংযোগের জন্য যায়। সেখানে শত শত ছাত্র প্রথমে ভাংচুর ও পরে অগ্নিসংযোগ করে। আগুন দেয়ার সাথে সাথে পুরো বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ৫ম তলায় ৬ছাত্র আটকা পড়ে যায় এবং সেখানেই তারা ৬জনেই পড়ে ভস্ম হয়ে যায়।
রাত ১০টার পরে তাদের অভিভাবকরা সন্তানদের বাড়িতে না পেয়ে জেলার প্রাণকেন্দ্র মিশনমোড়ে এসে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ ও তানভিরকে জানায়। পরে সমন্বয়ক আসিফ সেনাবাহিনীর মেজর কাওছারকে জানান। মেজর কাওছার রাত ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সহযোগিতায় সেই বাড়িতে ছাত্রদের খোঁজে যাব। তখনো সেখানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর ভিতরে প্রবেশ করে বাড়ির ৫ম তলায় ৬জনের ভস্ম হওয়া দেহ পরে থাকতে দেখতে পায়। ভস্ম হওয়া ছাত্রদের দেহ পরে থাকতে দেখে দুই ছাত্রের অভিভাবকরা হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন এবং তারা নিশ্চিত হন এই ৬জনের মধ্যে তাদের দুই সন্তানও আছে। যদিও হামলার আগেই আওয়ামিলীগ নেতা সুমন খান পরিবার সবাইকে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান।
পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মেজর কাওছারের উপস্থিতিতে ভস্ম হওয়া দেহের হাড় উদ্ধার করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠান।
এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শহিদার রহমান জানান, খবর পাওয়ার পর পরই আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। আগুন নিয়ন্ত্রনে নেয়ার পর ভিতরে প্রবেশ করে ৫ম তলায় ৬জনের ভস্ম হওয়া মৃতদেহ উদ্ধার করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেই।
এর আগে বিকেলে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা লালমনিরহাট সদর-৩ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাড. মতিয়ার রহমানের বাড়ি, সাবেক সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের বাড়ি এবং জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় ভাংচুর ও পরে আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়। এ সময় বেশ কিছু গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়।