মোঃ আবু বকর সিদ্দিক (অপু),সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বন বিভাগের বাধার কারণে ৩২টি বীরনিবাস নির্মাণ শুরু করতে পারছেননা ঠিকাদাররা। বন বিভাগ বলছেন, বনের জমিতে পাকা ভবন করার কোন বিধান নেই। এতে করে করে ওই ৩২ বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা। এঅবস্থায় একদিকে যেমন ঠিকাদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তেমনি অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাকা বাড়িতে থাকার স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি-তাঁরা শত বছর ধরে বংশ পরম্পরায় বনের জমিতে বসবাস করে আসছে। বনের জমিতে থেকেই যুদ্ধ করে তাঁরা দেশ স্বাধীন করেছেন। সেই বাপ দাদার ভিটেতেই তাঁদের পাকা বাড়ি করার অনুমতি সরকারকেই দিতে হবে।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় সখীপুর উপজেলায় ১০১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে বীর নিবাস বরাদ্দ হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে গত ১৩ মার্চ ১৮টি প্যাকেজে ১০১টি বীর নিবাস নির্মাণের লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রতিটি বীর নিবাসের জন্য ১৮ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮৮ টাকা ব্যয় ধরা হয়।
১৮ টি প্যাকেজে ১৮ জন ঠিকাদারকে বীরনিবাস নির্মাণে গত ২০ মে থেকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। আগামী তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়। ওই কার্যাদেশে পেয়ে ঠিকাদারেরা কাজ শুরু করলে ৩২টি ঘর নির্মাণে বাধা দিচ্ছে বন বিভাগ। বন বিভাগ বলছেন, বনের জমিতে স্থায়ী স্থাপনা (পাকা ভবন) করার কোন বিধান নেই।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরিক এন্টারপ্রাইজ পাঁচটি বীরনিবাস নির্মাণের কাজ পেয়েছে। এর মধ্যে চারটি পড়েছে বনের জমিতে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আব্দুল হাই তালুকদার বলেন, ‘কার্যাদেশ অনুযায়ী সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কাজ শুরু করতে পারছি না। এর জন্য তো আমরা ঠিকাদারেরা দায়ী নই।’
নিপুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম শামীম ছয়টি ঘর নির্মাণের কাজ পেয়েছেন। তার মধ্যে তিনটি বাড়ি বনের জমিতে পড়েছে। ঠিকাদার বলেন, কার্যাদেশ পেয়েই বীরনিবাস নির্মাণে ইট বালু সিমেন্ট নিয়েছি। এখন বন বিভাগের বাধার কারণে কাজ করতে পারছি না। সময় পার হলে টাকা চলে যাবে। এতে করে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এখানে আমাদের তো কোন দোষ নেই।
কালিদাস গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান পাঁচ বছর আগে ঘরের জন্য আবেদন করেছিলেন। এবার তিনি ঘর পেয়েছেন। ঠিকাদার তার বাড়িতে ইট বালু সিমেন্ট সবই এনেছেন। বনের জমিতে বসবাস করার অজুহাতে সেখানে ঠিকাদার বীর নিবাস নির্মাণ করতে পারছেন না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান বলেন, আমার দাদাও এই বাড়িতেই বসবাস করেছেন। দেড়শ বছর ধরে বংশপরম্পরায় আমরা এই বাড়িতে বসবাস করছি। এই বাড়িতে থেকেই দেশ স্বাধীন করেছি। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল শেষ বয়সে পাকা বাড়িতে থেকে মরবো। তা আর হচ্ছে কই?
সখীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সানবান্দা গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুর রহমান ৩০ বছর ধরে ওই বাড়িতে বসবাস করছেন। তিন বছর আগে তিনি মারা গেছেন। বীর নিবাসে থাকার তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
বীরমুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মাজেদা বেগম বলেন, ঘরের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জীবিত থাকতেই আবেদন করেছিলেন। মৃত্যুর তিন বছর পর সরকার তার জন্য একটি ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। এখন শুনতে পাচ্ছি এ জমি নাকি বনের। ৩০ বছর ধরে বাস করছি। বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা কেউ তো বলল না, এটা বনের জমি। বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কবর দেওয়ার সময়ও তো কেউ বাধা দিল না। ঘর দেওয়ার সময় কেন বাঁধা। ওই ২০ শতাংশ জমি ছাড়া আর কোথাও কোন জমি নেই। আমার বয়সও ৬০ বছর পেরিয়ে গেছে। আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধাও বীর নিবাসে থেকে যেতে পারেনি। আমিও হয়তো পারবো না।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. ওসমান গনি বলেন, সখীপুরে বেশিরভাগ মানুষই বনের জমিতে বাস করে। প্রধানমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপহার হিসেবে আমাদের ঘর দিয়েছেন। শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে যেখানে বসবাস করছেন সেখানেই বীর নিবাস করার অনুমতি দিতে হবে।
টাঙ্গাইল বন বিভাগের বহেরাতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বলেন, বনের জমিতে পাকা ঘর বা স্থায়ীভাবে স্থাপনা করা করার কোন বিধান নেই। এখন ঘর করতে হলে বন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, এ বিষয়ে সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। সমস্যাটি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানানো হয়েছে। আশা করি বিষয়টি শিগগিরই একটা সমাধান হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক:- মোঃ আবির ইসলাম
নির্বাহী সম্পাদক:- জামিল চৌধুরী
বার্তা সম্পাদক:- আরিফুল ইসলাম
হেড অফিস: ৪৭,পুরানো পল্টন আরবান পল্টন ভিউ কমাশিয়াল কমপ্লেক্স (৫ম তলা)
নিউজ মেইল: dainikprothombarta@gmail.com
যোগাযোগ: ০১৬৪৩-০৩১৩৭২/০১৮৬৮-৮৪৫৫৯৬
দৈনিক প্রথম বার্তা কর্তৃপক্ষ
Design And Develop By Coder Boss