নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
একটি বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তা বুঝতে হলে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে তাকালেই বুঝা যায়। ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকারের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২৭ টি অবকাঠামোর কাজ চলমান আছে। সেগুলো হলো : ৫ তলা ভীতের উপর ৫ তলা পর্যন্ত ২য় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ (উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার অফিসের জন্য), ১০ তলা ভীতের উপর ১০ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ (৫টি ইনস্টিটিউট, আন্তর্জাতিক ছাত্র বসানো অফিস এবং আইটি স্পেস এর জন্য), কোষাধ্যক্ষের জন্য ডুপ্লেক্স বাংলো নির্মাণ, ৫ তলা ভীতের উপর ৫ তলা পর্যন্ত অতিথি ভবন নির্মাণ (২০ জন অতিথির জন্য), ১০ তলা ভীতের উপর ১০ তলা পর্যন্ত ৪র্থ ইউটিলিটি ভবন নির্মাণ (১২০ শিক্ষক-কর্মকর্তার জন্য), ১০ তলা ভীতের উপর ১০ তলা পর্যন্ত ৫ম ইউটিলিটি ভবন নির্মাণ (১২০ শিক্ষক-কর্মকর্তার জন্য), ইউটিলিটি ভবনের ৫ তলা উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ (৪ জন শিক্ষক-কর্মকর্তার জন্য), ১০ তলা ভীতের উপর ১০ তলা পর্যন্ত বাসভবন নির্মাণ (শিক্ষক-কর্মকর্তার জন্য), ১০ তলা ভীতের উপর ১০ তলা পর্যন্ত ছাত্র হল নির্মাণ (আসন সংখ্যা-৮৫০), ১০ তলা ভীতের উপর ১০ তলা পর্যন্ত ছাত্রী হল নির্মাণ (আসন সংখ্যা-৮৫০), ১০ তলা ভীতের উপর ১০ তলা পর্যন্ত ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য টাওয়ার নির্মাণ, ৬ তলা ভীতের উপর ৬ তলা পর্যন্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য আবাস ভবন নির্মাণ, ১০ তলা ভীতের উপর ১০ তলা পর্যন্ত একাডেমিক ভবন নির্মাণ (১৮ টি একাডেমিক বিভাগের জন্য), ৫ তলা ভীতের উপর ৫ তলা পর্যন্ত স্কুল ও কলেজ ভবন নির্মাণ (নার্সারী হতে দ্বাদশ পর্যন্ত), ৩ তলা ভীতের উপর ৫ তলা পর্যন্ত মাল্টিপারপাস হল কাম টি.এস.সি. কাম জিমনেসিয়াম ভবন নির্মাণ, ২ তলা ভীতের উপর ২ তলা পর্যন্ত প্রকৌশল অফিস কাম ওয়ার্কশপ কাম গ্যারেজ নির্মাণ, ৫ তলা ভীতের উপর ৫ তলা পর্যন্ত চিকিৎসা কেন্দ্রের উর্দ্ধমূখী সর্ম্পসারণ নির্মাণ (অফিস, হাসপাতাল ও আবাসিক সুবিধা সম্বলিত), ১তলা বিশিষ্ট ২টি স্টেশন ভবন নির্মাণ (সাবস্টেশন ও জেনারেটরের যন্ত্রাংশ স্তাপন), ৩ তলা ভীতের উপর ৩ তলা পর্যন্ত মসজিদ নির্মাণ, ইমাম ও মুয়াজ্জিন এর আবাসনসহ (২০০০ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন), ক্যাম্পাসের চারিদিকে নিরাপত্তার জন্য সবুজ বেস্টনী নির্মাণ, খেলার মাঠ উন্নয়ন- ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস, বাস্কেটবল কোর্ট, শিশু পার্ক ও বৃক্ষরোপনসহ জলাশয়ে রিটেইনিং স্ট্রাকচার নির্মাণসহ সৌন্দর্য্য বর্ধন কাজ, প্রধান ফটকের কাছে ১ তলা গার্ডরুমসহ ২টি গেইট নির্মাণ, সমগ্র ক্যাম্পাসে অভ্যন্তরীণ সি সি ক্যামেরা ও রাস্তা নির্মাণ, ময়লা পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেইন ও কালভার্ট নির্মাণ, গভীর নলকূপ স্থাপন, ভবনসমূহের সাথে ভূ-গর্ভস্থ পানির পাইপ লাইন স্থাপন।
জানা গেছে, এইসকল অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার বিভিন্নভাবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার সাশ্রয় করতে পেরেছে। ২০১৮ সালের পি ডব্লিউ ডি রেট সিডিউল অনুযায়ী আরডিপিপি অনুমোদন থাকায় সেটা ২০২২ সালের পি ডব্লিউ ডি রেট সিডিউলে পরিবর্তনের সুযোগ থাকা সত্বেও তা না করে দরপত্র সমূহ প্রক্রিয়া করায় এবং ২০২০-২০২১ ও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে অনেক দরপত্র ৮-১০ শতাংশ নিম্ন মূল্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রদান করায় চলমান প্রকল্পে এই অর্থের সাশ্রয় হয়েছে।
অনুমোদিত এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। সরকার এটি ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। আর এই মেয়াদ বৃদ্ধি না হলে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত চলে যেত। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে বাঁধা সৃষ্টি হতো ও সরকারেরও এই টাকার ক্ষতি হতো বলে জানা যায়।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, “২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুসারে আমাদের এই প্রকল্প অনুমোদিত ছিল। বিভিন্ন কারণে এই প্রকল্পটি স্থবির হয়ে পড়েছিল। আমি ২০২২ সালের দিকে দায়িত্বে আসার পর তখন দ্রব্যমূল্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। এই সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দিয়েও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পাচ্ছিলাম না। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করে আমরা টেন্ডার নিতে পেরেছি এবং সরকারের অনেক টাকা বাচিয়ে দিয়েছি। বর্তমান সময়ে টেন্ডার করলে সরকারের অনেক টাকা বরাদ্দ করতে হবে। আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে দ্রুতসময়ে কাজ দিতে পেরেছি এবং কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছি। আর এই পরিবেশ সৃষ্টি করতে গিয়ে আমাকে লড়াই করতে হয়েছে। সকলের সহযোগিতায় আমি কাজের পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি। সময়মতো কাজ শুরু না করতে পারলে এই বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত যেত এবং সেটি ইতিবাচক কাজে ব্যবহার না হয়ে আইডল মানি হিসেবে পড়ে থাকতো।”
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যাই, বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়নে যে অগ্রগতি হয়েছে এতে আমরা সন্তুষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কাজের ধারাবাহিকতা মেইনটেইন করা হয়েছে। আমি গত ১ বছরে দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়টির কাজের অগ্রগতি হয়েছে এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকেও ভালো কাজ করে যাচ্ছে। তাদের আন্তরিকতাও ভালো কারণ আমরা যখনই কোনো বিষয়ে তথ্য চাই সেখান থেকে সঠিক সময়েই তারা দিয়ে থাকে। সেখানে যারা কর্মরত রয়েছে তারাও ডাইনামিক ও কাজে তাদের পারদর্শীতা দেখেছি।”
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী জোবায়ের হোসেন বলেন, “পিডব্লিডি রেট শিডিউল ২০১৮ অনুযায়ী কাজগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অনিহা থাকা সত্ত্বেও মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় আমরা বিভিন্ন ভাবে ঠিকাদারকে চাপের মধ্যে রেখে কাজগুলো চলমান রেখেছি। প্রকল্প কাজ চলমান থাকা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতা কামনা করছি। আশা করি ২০২৫ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।”