নরসিংদীতে রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তালা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়াকে হত্যার অভিযোগে দুই মামলায় ৫৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। একটি হত্যা মামলা, অন্যটি দ্রুত বিচার আইনে করা মামলা।
আজ শনিবার (২৫ মে) দুপুরে রায়পুরা থানায় মামলা দুটি করা হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন পলাশ।
হত্যা মামলার বাদী নিহত সুমনের বাবা উপজেলা চরসুবুদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজি নাছির উদ্দিন। এতে ২৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। দ্রুত বিচার আইনে করা মামলার বাদী নরসিংদী-৫ আসনের সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ছেলে ও উপজেলা আ. লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ পার্থ। এতে ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়। দুটি মামলাতেই আসামি করা হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিহত সুমনের প্রতিপক্ষ চশমা প্রতীকের প্রার্থী আবিদ হাসান রুবেলকে।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, সুমন হত্যার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩ আসামিকে গ্রেপ্তরা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।জানা যায়, গেল ২২ মে উপজেলার চরাঞ্চলে পাড়াতলীতে প্রচারণায় যান তালা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়া। একই দিন ওই ইউনিয়নে যান তার প্রতিপক্ষ চশমা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবিদ হাসান রুবেল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পাড়াতলীর মামদিরকান্দি গ্রামের ছলিমবাড়ি সামনে রাস্তায় দুই ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা মুখোমুখি হন। এ সময় তাদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরী হয়। এক পর্যায়ে রুবেল সমর্থকদের সরাতে সুমনের গাড়ি থেকে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। এতে উত্তেজিত হয়ে রুবেল সমর্থকরা তাঁর গাড়ি ভাঙচুর ও ঘেরাও করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে চলে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া।
এক পর্যায়ে সুমনে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালানোর সময় মারধরের শিকার হন। আহত সুমনকে তার কর্মীরা উদ্ধার করে দুপুরের দিকে পাড়াতলী থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাঁশগাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আনা হয়। সেখানে চিকিৎসক সুমনকে মৃত ঘোষনা করেন।হত্যা মামলার বাদী নিহত সুমনের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, মামলা করেছি। এখন আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। ছেলেকে আর ফিরে পার না কিন্তু ছেলে হত্যায় জড়িতদের বিচার দেখে যেতে চাই।
নিহত সুমন ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি অ্যাগ্রো ফার্ম, পোলট্রি ফিড, মাছের খাবার বিক্রি করতে। নরসিংদীর শহরে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতে তিনি। বিয়ের ১৬ বছর পর তাঁর স্ত্রী লিজা আক্তারের গর্ভে যমজ বাচ্চা এসেছে। রাজধানীর একটি হাসাপাতালে তিনি অস্ত্রোপাচারের অপেক্ষায় রয়েছেন। অনাগত দুই সন্তানকে দেখে যেতে পারলেন না নিহত সুমন মিয়া।
ঘটনার পর জড়িত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবিদ হাসান রুবেল ও তার কর্মীরা পলাতক রয়েছে।
দ্রæত বিচার আইনে করা মামলার বাদী সাংসদপুত্র রাজিব আহমেদ পার্থ বলেন, ২৫ বছর ধরে সুমনকে চিনি। সে একজন ভদ্র ও সুশিক্ষিত ছেলে।
ঘটনার দিন আবিদ হাসান রুবেল সুমনকে হত্যা করে অডিটরিয়ামে এসে আমাকে হত্যার হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সব আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচার দাবি জানাই।