শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন

একটি বিশেষ সতর্কতা মূলক পোষ্ট মিনিকেট চাল

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ মোঃ গোলাম রব্বানী:
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪
  • ১৩৫ Time View

বাঁচতে হলে জানতে হবে। মিনিকেট চালের ভাত গরমকালেও অনেকক্ষণ ভালো থাকে! আহারে! কত ভালো চাল! তাইনা?

আসুন জেনে নিই আসলেই কি আমরা ভালো চাল খাচ্ছি?নাকি আবর্জনা?

মিনিকেট নামে কোন ধান চাষ হয়না বাংলাদেশে।
তাহলে, এই চাল বাজারে আসে কোথা থেকে- এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ, মিনিকেট চাল তৈরী হয় কারখানায়।

দেশী জাতের ধান (মোটা চালের) চালকলে আসার পর শুরু হয় তেলেসমাতি। প্রথমে ধানের খোসা ছাড়ান হয়। খোসা ছাড়ানোর পর চালের অকৃত্রিম/ন্যাচারাল রঙে কিছুটা খয়েরি/বাদামি আভা থাকে। এরপর কেমিক্যাল ও হোয়াইটনার মেশিনের মাধ্যমে চালের খয়েরি/বাদামি আভার আবরণটিকে আলাদা করা হয়। এই আবরণটি বাদ দেওয়ার পর চাল কিছুটা সরু ও সাদা হয়। এখানেই শেষ নয়, পলিশার মেশিনের মাধ্যমে পলিশ করলেই হয়ে গেল মিনিকেট চাল।

এবার প্রশ্নের তীর তাক করে কেউ বলতেই পারেন- মোটা চালকে এতোভাবে প্রসেস করে মিনিকেট বানালে তো চাল ব্যবসায়ীর ক্ষতি।এবার ক্ষতির হিসেবটা করা যাক- ১০০০কেজি মোটা চাল প্রসেস করে মিনিকেট বানালে সাধারণত চাল পাওয়া যায় ৯৩৩কেজি, সাদা খুদ ২৬.৫ কেজি, কালো খুদ ১৪কেজি, মরা চাল ৪.৫ কেজি, ময়লা ০.৭৫ কেজি এবং পলিশ ২৭ কেজি।

যোগ করলে দেখা যায় এক হাজার কেজি চাল প্রসেস করার পর পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৬কেজি বেশী।এই ছয় কেজি হচ্ছে জলীয় বাষ্প ও পানি। রাইস ব্রান তেল কারখানাগুলো পলিশ কিনে নেয়, সাদা খুদ বাজারে চালের অর্ধেক দামে বিক্রি হয়। কালো খুদ আর মরা চাল পশুখাদ্য হিসেবে বিক্রি হয়। ভাবছেন চাল প্রসেসের খরচ কত? ১০০০কেজি মোটা চাল প্রসেস করে মিনিকেট বানাতে খরচ হয় মাত্র ৯০০টাকা হতে ১৫০০টাকা। অর্থাৎ কেজিপ্রতি ৯০পয়সা থেকে দেড় টাকা।

মোটা চাল প্রসেস করে মিনিকেট বানিয়ে বিক্রেতা একটু বেশী লাভ করলে ক্রেতার ক্ষতি কি?ছোট ক্ষতি হচ্ছে ক্রেতা চিকন চালের দামে মোটা চাল কিনছেন, অর্থাৎ কেজিতে ১৫থেকে ২০টাকা পর্যন্ত ঠকছেন। বড় ক্ষতি হলো কেজিতে ১৫ থেকে ২০টাকা বেশী দিয়ে মিনিকেট চাল নয়, ক্রেতা কিনছেন মোটা চালের আবর্জনা। কারণ, প্রসেস করার মাধ্যমে চালের উপরি আবরণ (bran অর্থাৎ pericarp, seed coat, aleurone layer, embryo) বা পুষ্টিকর অংশ বাদ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, চালের সর্বমোট ৮৫ ভাগ ভিটামিন B3 থাকে pericarp–এ, প্রোটিন আর ফ্যাট থাকে Aleurone layer -এ, খনিজের ৫১ ভাগ ও মোট আঁশের ৮০ ভাগ থাকে bran –এ, ভিটামিন B1 ও ভিটামিন E থাকে embryo -তে। চালের সব পুষ্টিকর উপাদান তেলের মিলে বিক্রির জন্য প্রসেস করে আলাদা করার পর চাল আর চাল থাকেনা, হয়ে যায় চালের আবর্জনা।

মিনিকেট চাল নামে চালের আবর্জনাকে যতোটা ক্ষতিকর মনে করছেন বাস্তবে আরও বেশী ক্ষতিকর। মোটা চালকে মিনিকেটে রূপান্তর করার বিভিন্ন পর্যায়ে সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড, সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড + টুথপেস্ট +এরারুটের মিশ্রণ, সোয়াবিন তেল, ফিটকারি, বরিক পাউডার ব্যবহার করা হয়। প্রতি মৌসুমেই বের হয় নিত্য নতুন কৌশল।

মিনিকেট চালে কখনো পোকা ধরেনা। কারণ পোকাও জানে এই চাল খাওয়ার যোগ্য নয়, এতে পুষ্টিগুণ নেই।
অথচ দেখতে সুন্দর এই অখাদ্যকে আমি আপনি আমাদের পরিবার কে নিশ্চিন্তে খাওয়াচ্ছি এবং নিজেরাও খাচ্ছি!
কিন্তু কেন!?

শুধু চাল নয়, এমন আরও হাজারো অখাদ্য, আবর্জনা আমরা প্রতিনিয়ত খেয়ে যাচ্ছি জেনে- না জেনে আর তার ফলাফল স্বরূপ ভুগতে হচ্ছে কঠিন কঠিন রোগে সেই সাথে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাচ্ছি এক ভয়াবহ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনব্যবস্থা!
হিসেব টা মেলানো খুবই সহজ, বাড়িতে কোনো মুরব্বী থাকলে একটু জেনে নিতে হবে আগেকার দিনে তারা কেমন খাবার খেয়ে জীবন যাপন করেছে আর তাদের রোগ বালাই কেমন ছিলো এবং তাদের চিকিৎসা-ই বা কেমন ছিলো।

আজকের দিনে আমরা হাজারো নিত্য নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছি আর নিত্য নতুন ঔষধ সেবন করে চলেছি যা একটা রোগকে ঠিক করে আরো শত রোগের জন্ম দিচ্ছে আমাদের শরীরে। এ যেনো এক চোরাবালির মধ্যে ডুবে আছি আমরা।

“সুস্বাস্থ্য যেমন
সকল সুখের মূল,
ঠিক তেমন
স্বাস্থ্যকর খাবার সুস্বাস্থের মূল।”

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

© All rights reserved © Doinik Prothom Barta
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102