দীর্ঘ এক যুগ ভোগান্তির পর অবশেষে খুলনার কয়রায় জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (খুলনা জোন) প্রকল্পের আওতায় কয়রা-কাশিরহাটখোলা-নোয়াবেকি- শ্যামননগর ৭ কিলোমিটার রাস্তা ৪৯ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কাজ অবশেষে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের উদ্বোধনে কয়রা উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার ২ লক্ষাধিক মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে৷ দীর্ঘ অপেক্ষার পর সড়কের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসী সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
২৩ এপ্রিল (মঙ্গলবার) দুপুরে কয়রা সদরে মধুর মোড় এলাকা থেকে দোয়ার মাধ্যমে এই কাজের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি হিসাবে খুলনা-৬ সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান ।
উদ্বোধন কালে এমপি রশীদুজ্জামান বলেন,’সড়কটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের কষ্ট দূর হবে। এজন্য সড়কের কাজ নির্দিষ্ট শেষ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ সড়ক উন্নয়নের ফলে পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মানুষও উপকৃত হবে। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার সমাজের সকল বিষয়কে সমন্বয় করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং সে কারণেই আজকের বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। ”দেশের জনগণ বুঝতে পেরেছে, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেই কেবল তারা সেবা পেতে পারে এবং ক্ষমতায় আসার পরই কেবল আওয়ামী লীগ সরকারই তা নিশ্চিত করেছে। তিনি কয়রা পাইকগাছাকে ইতিহাসের সেরা উন্নয়ন করার ঘোণনা দিয়ে অবহেলিত কয়রা মুছে ফেলার আশ্বাস দেন।
জানা যায়,২০০৯ সালে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কটি। এর পর আরও দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে সড়কের কয়েক স্থান ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সে সময় থেকে সড়কের ওই অংশ দিয়ে যানবাহন চলাচল সম্ভব না হওয়ায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হয় দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (খুলনা জোন) প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে কয়রা-কাশিরহাটখোলা-নোয়াবেকি-শ্যামনগর সড়ক সংস্কারে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পায় মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ২৬ মে কার্যাদেশ পেয়েও যথাসময়ে কাজ শুরু করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ২০২০ সালের মে মাসে কাজ চলা অবস্থায় দুর্যোগের(আম্পান) কবলে পড়ে সড়কটি ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
এ অবস্থায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের সাইটে রাখা মালামাল ও ক্ষতিগ্রস্ত কাজ দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ২০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করলে ১০ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে দরপত্রটি বাতিল করা হয়। জনগণের ভোগান্তি ও আন্দোলন ও দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন পর ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর সড়কটি নতুন করে নির্মাণের জন্য প্রাক্কলন ও নকশা তৈরি করে পুর্ণনির্মানের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়।
তার পর জনগণের দীর্ঘ দিনের ভোগান্তি লাঘবে বর্তমান এমপি রশীদুজ্জামান সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ ও চেষ্টার ফলে ২৩ এপ্রিল সড়ক নির্মাণের কাজ শুভ উদ্বোধন করা হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা। কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলনার মাহবুব ব্রাদার্স লিমিটেড । কাজটি শেষ হওয়ার কথা আগামী ৩১ ডিসেম্বর।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খুলনা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা-৬ সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে শামছ্ উদ্দিন আহম্মেদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বি. এম তারিক উজ- জামান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা, সাধারণ সম্পাদক নীশিত রঞ্জন মিস্ত্রীসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, এ সড়ক উন্নয়নের জন্য কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছু কাজ ও করা হয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পিছিয়ে যেতে হয়েছে। বড় ধরনের কোনো বিপর্যায় না হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।কাপড় ব্যবসায়ী আসাদ জানান ,ভাঙ্গা চোরা রাস্তার কারণে ব্যবসায়িক কাজে বিভিন্ন জায়গা থেকে মালামাল এনে বিক্রি করা কঠিন হচ্ছিল। এখন রাস্তার কাজ সম্পন্ন হলে অনেক দিনের কষ্ট দূর হবে।
কয়রা বাজার কমিটির সভাপতি সরদার জুলফিকর আলম জানান , অনেক দিন পর হলেও রাস্তাটির কাজ শুরু হলো। তবে সঠিকভাবে যাতে কাজ সম্পন্ন হয় সেদিকে কর্তৃপক্ষকে নজর দেওয়া উচিত। কাজের মান ঠিকমতো না হলে কষ্ট থেকেই যাবে।উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নূরুল ইসলাম কোম্পানি বলেন ‘আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল এমন একটা দিনের। যা হোক, রাস্তার কাজ শুরু হওয়ায় অনেক আনন্দ লাগছে । এখন কাজ প্রত্যাশা কাজ সঠিক ভাবে সঠিক সময়ে শেষ হওয়ার।
দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স লিমিটেড এর দায়িত্ব প্রাপ্ত তসলিম আহম্মেদ আশা জানান, ৪৯ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাস্তার কাজটি আগামী ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।