ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি,
মোঃঅহিদুজ্জামান লস্কর অপু:
নতু প্রজন্মের কাছে আমাদের দায় রয়েছে ঐতিহাসিক বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জন্মভিটা রক্ষনাবেক্ষন করে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে দায়িত্ব অর্পণ করতে চাই।
সংক্ষিপ্ত জীবনিঃ
বিপল্বী উল্লাসকর দত্তের অগ্নিযুগের উষালগ্নের সশস্র বিপ্লবী। পরাধীন ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন। একজন অভিজ্ঞ বোমা বিস্ফোরক ছিলেন।উল্লাসকর দত্ত “অভিরাম” ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।উল্লাসকর দত্তের বিখ্যাত উক্তি, I do not want any help from any Government.
১৮৮৫ সালের ১৬ এপ্রিল ব্রাক্ষনবাড়ীয়া জেলার সরাইল থানার কালীকচ্ছ গ্রামের বাঘবাড়ীতে এক বিত্তশালী,শিক্ষিত,অভিজাত পরিবারে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা হাওড়ার শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রথম ভারতীয় প্রিন্সিপাল ডঃ দ্বীজদাস দত্ত।
কালীকচ্ছ গ্রামটি বৃটিশ আমলে ছিল একটি উচ্চ শিক্ষিত গ্রাম এবং বৃটিশ বিরোধী বিপ্লবীদের গ্রাম। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা অখিল চন্দ্র নন্দী,রবীন্দ্র মোহন নাগ,আনন্দ চন্দ্র নন্দী, কমিউনিষ্ট নেতা অমিতাভ নন্দী,বিখ্যাত লেখক জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী,এডভোকেট জগত চন্দ্র নন্দী,এডভোকেট অপুর্ব কাঞ্চন নন্দী,মহিম চন্দ্র ভট্রাচার্য এই কালীকচ্ছ গ্রামের সন্তান।
এই কালীকচ্ছ গ্রামে জন্মগ্রহনকারী প্রকৌশলী তপব্রত চক্রবর্তী। যার নামে আমেরিকার বাল্টিমোর শহরে ” তপব্রত স্ট্রীট” নামে একটি রাস্তা আছে। অধ্যাপক ডঃ কালীপদ সেন আগরতলা বিমান বন্দরের নির্মাতা প্রবোধ চক্রবর্তী, বাংলার টলস্টয় খ্যাত ডাঃ মহেন্দ্র চন্দ্র নন্দী,কৈলাস সিংহ,বিরাজ মোহন দেব ওরফে বাঘা বিরাজ
বিখ্যাত বাঙ্গালী লেখক নিরোদ চন্দ্র চৌধুরীর মামার বাড়ী কালীকচ্ছ গ্রামে। কলকাতা হাইকোর্টের এটর্ণী জেনারেল ব্যারিষ্টার কালীপ্রসন্ন দাশগুপ্তের মামা হলেন বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের পিতা। বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের ছোট ভাই হলেন এডভোকেট বিজয় কর দত্ত। বিজয় কর দত্তের মেয়ে অর্থাৎ বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের ভাতিজীকে বিবাহ করেন হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার বেজুড়া গ্রামের শিক্ষাবিদ যোগেন্দ্রনাথ নন্দীর ছেলে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট প্রনব কুমার নন্দী মজুমদার।
১৯০৩ সালে এন্টাস পাশ করে কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ উল্লাসকর দত্ত ভর্তি হন। ইংরেজ অধ্যাপক রাসেল সব সময় বাঙ্গালীদের কুটক্তি করতেন। উল্লাসকর দত্ত ইংরেজ অধ্যাপক রাসেল উপর আক্রমন করেন। এরপর উল্লাসকর দত্তকে থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কার করার পর হতে উল্লাসকর দত্ত ইংরেজদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং বিপ্লবী হতে থাকেন।
উল্লাসকর দত্ত বিপ্লবী দল যুগান্তরে যোগ দেন। উল্লাসকর দত্ত নিজেই বোমা তৈরী করতে লাগলেন। একজন অভিজ্ঞ বোমা বিস্ফোরক হিসেবে পরিচিত লাভ করেন।
১৯০৮ সালের ১ মে বোমা ছুড়ে মারতে গিয়ে বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী নিহত হন এবং উল্লাসকর দত্ত মারাত্নক আহত হন। বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের তৈরী বোমা ক্ষুদিরাম বসু ও হেমচন্দ্র দাস ম্যাজিষ্ট্রেট কিংসফোর্ডকে আক্রমনে ব্যবহার করা হয়েছিলো ।
১৯০৮ সালের ২ মে পুলিশ উল্লাসকর দত্তসহ যুগান্তর দলের অনেক সদস্যকে গ্রেফতার করেন।
১৯০৯ সালে আলীপুর বোমা মামলায় উল্লাসকর দত্ত ও বারীন ঘোষের ফাসীর আদেশ হয়। পরবর্তীতে সাজা কমানো হয়।
আন্দামান দ্বীপের কুখ্যাত সেলুলার জেলে থাকার সময় বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তকে শর্ষে পেষার ঘানিতে কাজ করা, প্রচণ্ড রোদে মাটি কেটে ইট বানানো, গাছ কেটে লাকড়ি বানানোসহ অনেক কাজ করতে হতো। এরপরও তার ওপর চলত নানা ধরনের নির্যাতন। কাজে অস্বীকৃতি জানালে দু’হাত টানিয়ে বেঁধে চালানো হতো জঘন্য অত্যাচার।ক্রমাগত অমানুষিক পরিশ্রম ও নির্যাতনে উল্লাসকর দত্ত শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে হাত-পায়ে খিঁচুনি ধরা এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন এবং অনেকটাই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
১৯১৪ সালের দিকে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তকে মাদ্রাজের মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
১৯২০ সালে মাদ্রাজ মানসিক হাসপাতাল থেকে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি আর সক্রিয় বিপ্লববাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারেননি। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
১৯৩০ সাল পর্যন্ত সরাইল থানায় প্রতি সপ্তাহে একবার হাজিরা দিতেন।
১৯৩১ সালে উল্লাসকর দত্তকে আবার গ্রেফতার করা হয় এবং ১৮ মাস জেলে আটক রাখা হয়।
১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান ভাগ হলে উল্লাসকর দত্ত নিজ জন্মভুমি ব্রাক্ষনবাড়ীয়ার সরাইলের কালীকচ্ছ গ্রামে চলে আসেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের সরকারী ভাতার ব্যবস্থা,বাসস্থান,আহার,চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় কলকাতায় থাকার অনুরোধ করলে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত সবকিছুই প্রত্যাখান করেন। উল্লাসকর দত্ত ভারত পাকিস্তান ভাগ মেনে নিতে পারেনি।
১৯৪৮ সালে ৬৩ বছর বয়সে ভারতবর্ষের জাতীয় কংগ্রেসনেতা,হবিগঞ্জ জেলার পৈল গ্রামের বাগ্মী বিপিন চন্দ্র পালের বিধবা মেয়ে লীলা রানী পালকে বিয়ে করেন। লীলা রানী পালের অর্ধাঙ্গ অবশ ও কয়েকটি আঙ্গুঁল চিরতরে বেঁকে গিয়েছিল। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় লীলা রানী পালের চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহন করেছিলেন।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের রাজনীতির অস্বস্তিকর পরিবেশ দেখে উল্লাসকর দত্ত কালীকচ্ছের বিশাল সম্পত্তি ফেলে দিয়ে ভারতের কলকাতায় চলে যান।
পরে কলকাতা থেকে আসামের শিলচরে চলে যান।শেষ জীবন আসামের শিলচরে কাটিয়ে দেন।
শিলচর থাকাকালীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং আসাম রাজ্যে সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জন্য আর্থিক সাহায্যে ও পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করলে তিনি প্রথ্যাখান করেন।
উল্লাসকর দত্ত বলেন,
I do not want any help from any Government.
১৯৬২ সালে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের স্ত্রী লীলা দেবী মৃত্যুবরন করেন।
১৯৬৫ সালের ১৭ মে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত শিলচরে মৃত্যুবরন করেন। তাঁর মৃত্যুতে শিলচর শহরসহ ভারতে