শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন

টঙ্গীতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি বেচা-কেনা বন্ধের পথে, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

  • Update Time : সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
  • ২২৪ Time View

মাহাবুল ইসলাম গাজীপুর

জমির দলিলের উৎসে কর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় গাজীপুরের টঙ্গী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের আওতাধীন এলাকায় (গাছা, টঙ্গী পূর্ব, পশ্চিম ও পূবাইল) জমি ক্রয়-বিক্রয় একেবারে নেই বললেই চলে। এসব এলাকার রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম টঙ্গী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

গাছা, টঙ্গী পূর্ব, পশ্চিম ও পূবাইল মেট্রোপলিটন থানার অবস্থান গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় হওয়ায় এখানে জমি কেনা-বেচার পরিমাণ অনেকাংশে বেশি হওয়ার কথা। কারণ ঢাকার অদূরে এই এলাকাটি নগরায়নের ছোঁয়া পেয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ যোগাযোগব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসায় আবাসন ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে এখানে। শুধু তাই নয়, দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে। কিন্তু বর্তমানে পূবাইল থানা বাদে ৯৩টি মৌজায় কাঠাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা উৎসে কর আরোপ করায় জমি কেনা-বেচার পরিমাণ ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে।

এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে এবং চলতি অর্থবছরের রাজস্বের পরিমাণ বিগত সময়ের চেয়ে অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে কিছু হেবা দলিল ও দায় মোচন (রিডামশন) দলিল সম্পাদনের মধ্যেই টঙ্গী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে। উৎসে কর বেশি হওয়ায় এই এলাকায় জমি কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ক্রেতারা। আগে যারা এখানে জমি কিনে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও আবাসন গড়ার আগ্রহ দেখাতেন তারা এখন রেজিস্ট্রি খরচের ভয়ে এই এলাকায় জমি কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে করে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, একই সঙ্গে উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী।

জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (করনীতি) ডা. সামস উদ্দিন আহমেদ গত বছরের ৩০ নভেম্বর এ সম্পর্কিত (উৎসে কর বৃদ্ধি) একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এ ছাড়া শ্রেণি ‘ক’ হতে শ্রেণি ‘খ’ এ উল্লেখিত ভূমিতে অবস্থিত স্থাপনা বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোরপ্রতি বর্গ মিটারে অতিরিক্ত করারোপ করায় দাতা গ্রহিতারা এখন দিশেহারা। অপরদিকে শ্রেণি ‘ঙ’ তে উল্লেখিত ভূমিতে অবস্থিত স্থাপনা বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেস এবং ক্রমিক নং-১ এ উল্লেখিত মৌজায় ভূমিতে অবস্থিত স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেসের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত করারোপ করায় বলতে গেলে এই এলাকায় ক্রয়-বিক্রয় একেবারেই বন্ধ। বিষয়টি নিয়ে দাতা-গ্রহীতাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

নাসির উদ্দিন নামে টঙ্গীর এক বাসিন্দা জানান, যেদিন থেকে সরকার কাঠাপ্রতি ৮০ হাজার ও পরে ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব নির্ধারণ করেছে, সেদিন থেকেই জমি ক্রয়-বিক্রয় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, কেউ যদি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ১ কাঠা জমি কেনেন তাহলে সরকারকে ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব দিতে হয়। আবার যদি কেউ ৪০ লাখ টাকা দিয়ে ১ কাঠা জমি কিনে তা হলেও তাকে ৫০ হাজার টাকা সরকারের ঘরে রাজস্ব দিতে হচ্ছে। এটি বৈষম্যমূলত। এতে মানুষ জমি ক্রয়-বিক্রয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে।

টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন বলেন, মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান করার জন্য ৪ কাঠা জমি বিক্রয় করতে চেয়েছিলাম কিন্তু কাঠা প্রতি উৎসে কর বৃদ্ধি পাওয়ায় জমি ক্রয়-বিক্রয় করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে টঙ্গী দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন বকুল বলেন, গত বছরের ২২জুন থেকে জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে উৎসে করে সরকারের পক্ষ থেকে একটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত বছরের ৩ অক্টোবর জমির দলিলের ওপর উৎসে কর আরোপ করা হয় কাঠাপ্রতি ৮০ হাজার টাকা। পরে ৩০ নভেম্বর একটি সংশোধনী এনে কাঠাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করা হয়। জমির উৎসে কর বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে টঙ্গী সাব রেজিস্ট্রি অফিসের আওতাধীন এলাকায় জমির ক্রয়-বিক্রয় একেবারেই কমে গেছে।

প্রায় একই রকম তথ্য দিয়ে টঙ্গী দলিল লেখক সমিতির সভাপতি কামরুজ্জামান টুটুল বলেন, উৎসে কর বেড়ে যাওয়ায় গাছা পূবাইল ও টঙ্গী এলাকায় জমি বেচা কেনা বন্ধের পথে। মানুষ তার প্রয়োজনে জমি বিক্রি করতে পারছেন না। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাও এই এলাকায় জমি কেনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

© All rights reserved © Doinik Prothom Barta
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102